Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তবাসীর দিন কাটছে আতঙ্কে

0

মেহেরপুর প্রতিনিধি :
মানসিক ভারসাম্যহীন এক কৃষক ভারতীয় সীমান্তরক্ষির বন্দুক কেড়ে নিয়ে আসার পর গত দশদিন ধরে মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত এলাকার মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষিদের বন্দুকের তাকের মুখে মেহেরপুর সীমান্তের জয়পুর, আনন্দবাস, নাজিরাকোনা ও পাশ্ববর্তী হুদাপাড়ার কৃষকরা সীমান্তবর্তী জমিতে যেতে পারছেনা। মাঠের জমি সেচ সংকটে শুকিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে সংগ্রহ করতে না পারায় মাঠের জমিতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি।

মুজিবনগর উপজেলার হুদাপাড়ার ওপারে ভারতের নদীয় জেলার কৃষ্ণনগর সেক্টরের ‘সিকরা সীমান্ত পোস্টে’র বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়ার এপারে প্রবেশ করে গত ১৭ জানুয়ারি। সীমান্তের ৯৫ মেইন পিলারের কাছে বাংলাদেশ অংশে মুজিবনগর উপজেলার হুদাপাড়ার অনেকটা মানসিক ভারস্যাহীন কৃষক ইনসান আলী মাঠে কাজ করছিলেন। সিকরা ক্যাম্পের বিএসএফএর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ইনসান আলী জীবন বাঁচাতে ওই বিএসএফ সদস্যের বন্দুক কেড়ে নিয়ে পাশ্ববর্তী সরিষা ক্ষেতে ফেলে নিজ বাড়িতে পালিয়ে আসেন। ওইদিনই বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর খোঁজাখুঁজি করে বন্দুক উদ্ধার করে বিএসএফ’র কাছে হস্তান্তর করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র সদস্যরা। এরপর থেকেই বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তের এপারে বন্দুক তাক করে অবস্থান করছে। অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্যও মোতায়েন করেছে তারা। ফলে কৃষকরা ভয়ে মাঠে যেতে সাহস করছে না। ভরা বোরো মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ এলাকার কৃষকদের। কাঁটাতারের বেড়ার এপারে রয়েছে ভারতীয় কৃষকদের চাষ। ভারতীয় কোনো কৃষক আসছেনা তাদের জমিতে। এ ঘটনার আগে দু-দেশের কৃষকরা অনেকটাই মিলেমিশেই কাজ করতেন। মুজিবনগর সীমান্ত ফাঁড়ি বিজিবি সদস্যরা এলাকার কৃষকদের শুক্রবার জানিয়েছেন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য।

জয়পুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, বিএসএফ ও ইনসান পাগলের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনার পর আমরা সবাই আতঙ্কিত। প্রথমদিকে রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে দিত না বিজিবি। শুক্রবার থেকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য বলেছেন মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। তারপরও সীমান্তের জমিতে একা একা কাজে যেতে ভয় করছে। গ্রামের মহিউদ্দিন, রমজানসহ এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, এখন বোরো আবাদের মৌসুম। মাঠে প্রচুর কাজ। আর আমাদের সব জমি আছে সীমান্ত এলাকায়। সেখানে গিয়ে ঠিকমত কাজ করতে পারছি না। যেটুকু পারছি তাও খুব আতঙ্কে করতে হচ্ছে।

জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ন সমাধান চাই। তা না হলে কৃষদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেকেই নিজ জমিতে যেতে পারছে না। বিজিবি’র পক্ষ থেকে সাবধানে কাজ করার কথা বললেও আনুষ্ঠানিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্ক কাটবে না। এ ঘটনাটি আরেকটু উসকে দিয়েছে ভারতীয় কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে চোরচালানকারী ও দুষ্কৃতিকারী অপবাদ দিয়েছে ওই মানসিক ভারসামহীন ব্যক্তিকে। ভারতীয় টিভি চ্যানেল-৯সহ কয়েকটি টেলিভিশনে ওই খবর প্রচারের পর আতঙ্ক বেশি ছড়িয়েছে বলে দাবি ইউপি সদস্যসহ সীমান্ত গ্রামবাসীদের।

মুজিবনগর উপজেলার বিজিবির আনন্দবাস ক্যাম্প কমান্ডার ও বিজিবির মুজিবনগর কোম্পানি কমান্ডার কোনো কথা বলতে চাননি।

চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইসতিয়াকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করছি। আমরা সব সময় সীমান্তবাসীর পাশে আছি। সাবধানে চলাচল করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিজিবি সদস্যদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.