Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে তিন বছরে ১৯ জনের মৃত্যু

হোমিওপ্যাথিক দোকান থেকে মিলছে রেকটিফাইড স্পিরিট

0

প্রতিবেদক :
যশোরে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে গত তিন বছরে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মারা গেছেন তিনজন। এরমধ্যে একজনের ময়নাতদন্ত করা হলেও অন্যজনকে নিয়ে গোপনে দাফন করেন স্বজনরা। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক তোলপাড় হলেও পরে থিতিয়ে যায় প্রশাসনের তৎপরতা। তাই মদ্যপান নাকি স্প্রিট পানে তারা মারা গেছেন সেটা আর জানা যায় না। আবার বৈধ না অবৈধ দোকান থেকে সেগুলো কেনা হয়েছিল সেটাও অন্ধকারে রয়ে যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, আগের মৃত্যুর কারণ বিষয়ে তার কাছে তথ্য নেই। তবে সর্বশেষ তিনজনের মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। হোমিওপ্যাথিক দোকান থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট কিনে তারা পান করেন বলে জানতে পেরেছি। আজ রোববার (২৯ জানুয়ারি) অভিযান চালানো হবে। এজন্য তিনজনের মৃত্যু নিয়ে এরবেশি বলতে চাই না।

তিনি বলেন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানে রেকটিফাইড স্পিরিট বিক্রি করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু যশোরের কোনো হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানের সেই অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিক্রেতা সমিতির নেতৃবৃন্দর সাথে কথা বলেছি। তাদের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র মতে, গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে যশোর সদরের আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি বাগানে এই গ্রামের ইসলাম হোসেন, আবুল কাশেম ও জাকির হোসেন এবং সিতারামপুর গ্রামের বাবলু হোসেন ও রিপন হোসেন নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করেন। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন। অবস্থায় অবনতি হলে ইসলামকে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে তথ্য গোপন করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনি মারা যান। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ছাড়পত্র ছাড়াই মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান। অন্য চারজনও অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে তারা একে একে যশোর হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে জাকির হোসেন দুপুর পৌনে একটার দিকে মারা যান। এরপরই নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বাবলু ও রিপন হোসেন হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সরে পড়েন। আর শুক্রবার রাতে মারা যান আবুল কাশেম।

এরআগে ২০২০ সালের ১৭ জুন যশোরের ঝিকরগাছায় নেশাজাতীয় দ্রব্য খেয়ে মারা যান রাজাপুর গ্রামের হাবিল গাজী ও নুর ইসলাম খোকা, বর্নি গ্রামের ফারুক হোসেন, হাজিরালী গ্রামের আসমত আলী, পুরন্দরপুর গ্রামের হামিদুর রহমান এবং ঋষিপাড়ার নারায়ণ। একই বছরের ২৫ ও ২৬ এপ্রিল নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি কালীতলা এলাকার শাহিন, যশোর শহরের বেজপাড়ার নান্নু, শহরতলির ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান, শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মনিবাবু, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবু, যশোর শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়ার বাসিন্দা মদের দোকানের কর্মচারী আব্দুর রশিদ, চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলার আক্তারুজ্জামান, ঝিকরগাছার কাটাখালি গ্রামের সাহেব আলী, মণিরামপুরের মোহনপুর গ্রামের মোমিন ও মোহনপুরের মুক্তার আলী মারা যান।

যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুর রশিদ জানান, দুইদিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অসুস্থ অবস্থায় স্বজনরা তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রোগীদের মুখে গন্ধ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের গন্ধ বের হলে জানাজানি হয়।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, মৃতরা অতিরিক্ত বা বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেছিলেন। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ তাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। দুইজনের গোপনে দাফন করা হয়েছে। আর কাশেমের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.