Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরে সূর্যমুখী ফুল দেখতে মানুষের ভিড়

ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে ৫০ বিঘা জমিতে চাষ

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
সূর্যমুখী চাষের জমিতে ফুল দেখতে আসা ভিড় ঠেকাতে কাহিল হচ্ছে মেহেরপুরের আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারের কর্মীরা। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করছে সেখানে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষিসমৃদ্ধ মেহেরপুর জেলায় সূর্যমূখী চাষ বাড়ছে। সারাদেশে এই চাষ সম্প্রসারণে জেলা সদরের আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখীর বীজ চাষ চলছে। জেলায় রবিশস্যের চাষাবাদে ২০২০ সাল থেকে সূর্যমুখী চাষ বেড়েছে। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ও আগ্রহী করে তুলতে জেলার একমাত্র তৈলবীজ খামার আমঝুপিতে সুর্যমুখীর বীজ উৎপাদনে চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ হলে দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণ হবে।

সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে এবারও ২০ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জেলায় বিভিন্ন কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগে আরও ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছে। এসব সূর্যমুখী চাষের জমিতে ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

একধরনের একবর্ষী ফুল সূর্যমুখী। ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো বলে এর নাম সূর্যমুখী। ফুলের পাপড়ি খেতে বাগানে আসে বিভিন্ন পাখি। উড়াউড়ি করে বাগানময়। গত তিনবছর আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারে বীজের জন্য সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার মানুষ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ছুটে আসছে বিনোদনের জন্য। দর্শনার্থীদের কেউ ফুল ছিড়ে বীজ উৎপাদনে ব্যাহত করায় তাদের ঠেকাতে লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন খামার কর্তৃপক্ষ।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার যেন সূর্যমুখী ফুলের রাজ্য। হলুদ রঙের ঝলকানি দেখতে ছুটে আসছে শত শত নারী পুরুষ। শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে মানুষের ঢল নামে সেখানে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সূর্যমুখী মাঠটি। এখানে আগেই এসেছে বসন্ত। মৌমাছিরা শেষ বিকেলে ব্যস্ত হয় সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে। এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আগত সিংহভাগ দর্শনার্থীদের দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে, কেউবা নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। কেউবা ব্যস্ত ভিডিও তৈরিতে।

তবে খামার কর্তৃপক্ষ মোটেও খুশি নন দর্শনার্থীদের আগমনে। কারণ দর্শনার্থীরা বাগানে ঢুকে ফুল ছিড়ে উৎপাদন ব্যাহত করছে। ফুলছেড়া প্রতিরোধে থাকা খামারের শ্রমিক রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ফুলও ছিড়ে ফেলেন। তাই দর্শনার্থীদের কাছে তাদের অনুরোধ, তারা যেন সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের কোনো ক্ষতি না করেন।

মাহবুবুল মন্টু সপরিবারে সৌন্দর্য উপভোগে এসেছেন। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফুল তাদের খুব ভালো লাগে। এজন্য কদিন থেকে তারা সপরিবারে জেলা শহর থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত উপভোগ করেন ফুলের। মন্টুর সহধর্মিনী ফাতেমা বিনতে রাশেদ জ্যোতি জানান, তাদের বাড়িতে দুইশ’ প্রজাতির ফুলের বাগান। ফুল ও প্রকৃতি তার প্রিয়। এজন্য পরিবার নিয়ে তিনি গত ১০ দিন ধরে বিকেলে এখানে বেড়াতে আসেন।

মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারে সূর্যমুখীর হলুদ ফুলের সমারোহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। অনেকেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন।

মেহেরপুর আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারের উপ-সহকারি পরিচালক আবু তাহের সরদার জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যসুখী চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তাছাড়া অন্যান্য তৈলবীজ যেমন সরিষা ও তিলের চেয়ে তেলও বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুর্যমূখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে বিদেশ থেকে এর আমদানি কমে যাবে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.