Take a fresh look at your lifestyle.

আজ একুশ মানে আমার কাছে অসংখ্য প্রশ্ন

0

শ্রাবণী সুর

ফাগুন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো সবার প্রাণে …ভাষায় টানে ..হৃদয়ের আহ্বানে। ফাগুন আসুক আমাদের ঘরে শহীদদের সম্মানে … ঢাকা থেকে রাজশাহীর খাপরা ওয়ার্ড ……. আজকাল ভুলে যাচ্ছি!

কত কথা কত যুদ্ধ কত রক্ত ঝরেছিল এই ফাগুনে। আগুন লেগেছিল কৃষ্ণচূড়ার বনে বনে। আপামর বাঙালির হৃদয়ে। একুশ এসেছিল গভীর ক্ষতের সাথে আনন্দের লহরি বইয়ে। আমাদের কাছে তাই এই মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের সার্বিক জাগরনের উৎসমুখ একুশ। স্বাধীনতার অনুপ্রেরণার অনির্বাণ শিখা।

শুধু বাংলাদেশিরাই নয়, বিশ্ববাসীও জানেন। দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতীয় ইতিহাসের এ দিনটি একদিকে যেমন স্মরণের, অন্যদিকে উজ্জীবিত হওয়ার। মায়ের ভাষাকে ছিনিয়ে আনার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ’৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এ দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাদের সে আত্মদানের কথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের স্বীকৃতির ফলে কার্যত ভাষা শহীদরাও বিশ্বব্যাপী বিরল সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন। হাজার বছর ধরে জাতির অভ্যন্তরে যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লালিত হয়ে আসছিল, মূলত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।

একটি জাতিসত্তার মূল বিষয় হচ্ছে তার ভাষা। ভাষাকে মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও গৌরবের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পারস্পরিক মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হলো ভাষা। আহমদ শরীফ ভাষাকে জীবনানুভূতির বাহন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার ভাষায়, ‘ভাষা হচ্ছে জীবনানুভূতির বাহন, বেশি করে বললে বলতে হয়, ভাষাই জীবন।’ প্রত্যেক জাতির কাছে তার মাতৃভাষা পরম আদরের ধন। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানবশিশু প্রথম মাকে ডাকে। চিন্তা করতে শেখে এবং সে চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে শিখে। তাই মৌলিক চিন্তার বিকাশ স্বাভাবিকভাবে মাতৃভাষার মাধ্যমেই হয়।

আজকাল একুশ আমাকে ভাবায়। বাস্তব জীবনে একুশের চেতনা বাংলাভাষার অস্তিত্ব আমরা কতটুকু বহন করছি? একুশে ফেব্রুয়ারি এলে সভা সেমিনার সিম্পোজিয়াম বক্তৃতা করে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি। বাস্তব জীবনে পরিবারে তার কতটুকু প্রতিফলন ঘটাচ্ছি?

১৯৫২-তে যে মেয়েরা ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে ব্যানার নিয়ে ঘুরেছিল দিনরাত, একাকার করে রাত জেগে শাড়ির আঁচল মাজায় গুজে ইডেন কলেজে শহীদ মিনার বানিয়েছিল, আজ তারা কোথায়?

আমরা একুশ এলে বর্ণমালাখঁচিত শাড়ি পাঞ্জাবিতে সেজে বর্ণিল হই। মননে বর্নিল হচ্ছি কি?
সকলে মিলে একটু হিসাব করি কয়টি শব্দ প্রতিদিন সঠিকভাবে বাংলায় বলি?

লেখক : সভাপতি, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, যশোর

Leave A Reply

Your email address will not be published.