৯ দিন পর আদালতে মামলা, তদন্ত কমিটির সময় বৃদ্ধি
ইন্টার্ন চিকিৎসককের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনা
প্রতিবেদক :
যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে পিটিয়ে হাত ও দুই পা ভেঙ্গে দেয়ায় পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ না করায় ৯ দিন পর আদালতে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে আহত জাকির হোসেনের ভাই রংপুর কাউনিয়ার হরিশ্বর গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ্জামানের ছেলে রেলওয়ের সাব অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম এ মামলা করেছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদির আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, মামলায় সাত মেডিকেল ছাত্র ও ইন্টার্ন চিকিৎসককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন : যশোর মেডিকেল কলেজের ৪র্থ ব্যাচের ছাত্র শামীম হোসেন, ৫ম ব্যাচের ছাত্র আবদুর রহমান আকাশ, ৬ষ্ঠ ব্যাচের ছাত্র মেহেদী হাসান লিয়ন, ৭ম ব্যাচের ছাত্র রাসেল, ৯ম ব্যাচের ছাত্র শাকিব আহমেদ তনিম, সৌম্য সাহা ও ১০ম ব্যাচের ছাত্র তন্ময় সরকার।
মামলার নথি মতে, জাকির হোসেন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তার ও কলেজের হোস্টেলের ১০৫ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা। আসামিরা প্রায় জাকির হোসেনের পাশের রুমে মাদক সেবন ও হৈ-চৈ করতো। এতে পড়াশুনার অসুবিধা হওয়ায় জাকির হোসেন প্রতিবাদ করায় তাকে খুন জখমের হুমকি দিয়েছিল আসামিরা। গত ৩১ জানুয়ারি ১০২ নম্বর কক্ষে আসামিরা গাঁজা সেবন করে হৈ-চৈ করছিলেন। এসময় জাকির তাদের হৈ-চৈ করতে নিষেধ করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে জাকির হোসেনের রুমে এসে রাসেলের নির্দেশে অন্যরা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, কাগজপত্র ও চাবি নিয়ে যায়। জাকিরের চিৎকারে আশেপাশের রুমের আবাসিক ছাত্ররা এসে তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এঘটনার পর জাকিরের স্বজনেরা কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি গ্রহণ না করায় তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।
হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনের বড়ভাই জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ২ ফেব্রæয়ারি থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নথিগ্রহণ করেনি থানা পুলিশ। একইসাথে কলেজ প্রশাসনের তদন্ত অগ্রগতি না দেখে আদালতের দারস্থ হয়েছি। অভিযুক্তরা তার ভাইয়ের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মোটরসাইকেলে এসে তার ভাইকে হুমিক দিয়ে যাচ্ছেন। একইসাথে মারামারির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওন তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি অভিযুক্তদের বাঁচাতে নানাভাবে প্রভাবিত করছেন।
এদিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি আরও পাঁচদিনের সময়ের জন্য আবেদন করেছেন। তবে এই তদন্ত কমিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরকেই এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহিদুর রহমান জানান, তদন্তের স্বার্থে কমিটি আরও পাঁচদিনের সময় চেয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কমিটির সময় বাড়ানো হয়েছে। এর আগে আরও দুদিন সময় চেয়েছিল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। বর্ধিত সময় বৃহস্পতিবার শেষ হয়। একইসাথে প্রাথমিক অভিযুক্তরা যে ছাত্রবাসে থাকতো সেই তিনটি কক্ষ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজন যদি প্রভাবিত করে; তার প্রভাবিত করা গুরুত্বপূর্ণ হবে না।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি কলেজের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। তাছাড়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের অনুরোধ ছিল কলেজ প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই মামলা গ্রহণ করার। আদালতে ভুক্তভোগীরা মামলা করতেই পারে। আদালত তদন্তের নির্দেশের চিঠি এখনও পাইনি। পেলে আমলে নেওয়া হবে।