Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরের হতভাগ্য দুজন বাঁচতে পারে লটারির ওষুধে

সন্তানের মৃত্যুর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন হতভাগ্য পিতা

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানের মৃত্যুর আবেদন করা তোফাজ্জেল হোসেনের একমাত্র সন্তান ও নাতি (মেয়ের ছেলে) লটারির ওষুধে বেঁচে যাবে। আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে পরিবারটির পক্ষে ওষুধ কেনা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রথম সন্তানের মৃত্যু সহ্য করার মতোই অপর ছেলে এবং নাতির কষ্টযন্ত্রণা সহ্য করছে পরিবারটি। এর আগে বিরল রোগে তার প্রথম সন্তানটি বড় বড় চিকিৎসক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। তোফাজ্জেল তার সন্তানের মৃত্যুর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন।

বুকে কী এক নিদারুণ কষ্ট ও দুঃখ নিয়ে একটি নয়, দুটি ছেলে, স্ত্রী ও একমাত্র নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন হতভাগ্য অসহায় পিতা! অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেয়া যুবক মেহেরপুর জেলা শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন। বাবা-মা নিজের প্রাণের বিনিময়েও সন্তান-সন্ততিকে বাঁচাতে চান, এটাই চরম সত্য। কিন্তু বাস্তবতা কখনও কখনও এই সত্যকে হার মানায়!

দুই ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে না পারা অসহায় বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনে বলেছিলেন, ‘দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে, প্রতিবন্ধী স্ত্রী ও রোগাক্রান্ত নাতির মৃত্যুর অনুমতি দেয়া হোক, তা না হলে চিকিৎসার ব্যয়ভার নেয়া হোক।’ পরদিন ২০ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় এবং টিভি চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঝড় উঠেছিল। বিবিসি, এএফপি, বৃটিশপত্রিকা গার্ডিয়ানের সংবাদ শিরোনাম হয় তাদের নিয়ে। বিশে^র বিভিন্ন দেশ তার চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছিল। এরমধ্যে ভারত এবং চীন বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করে। ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত নিউরোজেন ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইন ইন্সটিটিউটের সহায়তা নিতে সম্মত হন তোফাজ্জেল। ওই প্রতিষ্ঠানের নিউরো সার্জন অলোক শর্মা মুম্বাইয়ের হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। এগিয়ে আসে এয়ার ইন্ডিয়া।

অর্থনৈতিক কারণে যে পরিবারটি চিকিৎসা করাতে না পেরে সন্তানদের মৃত্যুর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিল, সেই তিনজন রোগিসহ পরিবারের আরও তিনজনকে একটি মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় নিউরোজেন ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইন ইন্সটিটিউট তাদের পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে। শুধু তাই নয়, সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নেয়াসহ বিমানবন্দরে তাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান এয়ার ইন্ডিয়া অফিসার। হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাদের ছবি তোলা হয়। বিমানে তাদের প্রত্যেকের জন্য এয়ার ইন্ডিয়া রেখেছিল অ্যাটেনডেন্ট। তাদের বিমানে পৌঁছে দেয়া হয় মুম্বাইয়ে। সেখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসায় তাদের সুস্থ করতে পারেননি চিকিৎসকরা। এয়ার ইন্ডিয়া তাদের ফের বিনা খরচে বিমানে ফিরতি টিকিটের ব্যবস্থা করেন। ২২ জুলাই ২০১৭ সবুর মারা যায় নিজ বাড়িতে। ওই বিরল রোগে এখন ভুগছে তোফাজ্জেলের আরেক সন্তান রায়হানুল ইসলাম (১৮) ও নাতি সৌরভ হোসেন (১৩)।

হতভাগ্য এ অভিভাবক জানান, জন্মের পর থেকেই ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি জিনগত অসুখ। এই রোগে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। চলার ক্ষমতা হারায়। একপর্যায়ে মৃত্যু অনিবার্য। তোফাজ্জেলের কাঁধের ওপর থেকে নিকটাত্মীয়রা হাত সরিয়ে নিয়েছেন। দিন যতই যাচ্ছে ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একমাত্র মেয়ের সন্তানটির শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। এ অবস্থায় তোফাজ্জেল চোখে অন্ধকার দেখছেন। তোফাজ্জেলের স্ত্রী শিরিনা বেগম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।

তোফাজ্জেল এতদিন জানতেন, এ রোগের কোনো ওষুধ নেই, নেই কোনো চিকিৎসা। পর্যায়ক্রমে পঙ্গুত্ব বরণ আর সবশেষে মৃত্যুই এই রোগের পরিণতি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন এই বিরল ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ রোগের চিকিৎসা আছে। এই রোগের ইনজেকশনের দাম ২২ কোটি টাকা। এই ইনজেকশন প্রতিমাসে বিশে^র দুজনকে লটারির মাধ্যমে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই রোগের চিকিৎসায় ‘ওনাসেমনোজেন অ্যাবেপারভোভেক’ নামক সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য জিন থেরাপি আবিষ্কার করেছে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস। সিএসআর ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে প্রতিমাসে লটারির মাধ্যমে বিশে^র দুজন শিশুকে বিনামূল্যে এ ওষুধটি দেয় নোভার্টিস। গত এপ্রিলে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতলের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি চিকিৎসক জুবাইদা পারভিন রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে ওই ক্যাম্পেইনে বাংলাদেশের রায়হান নামের এক কিশোরের নাম লেখান। গত ১৪ সেপ্টেম্বর লটারিতে রায়হানের নাম আসলে ওষুধটি দেশে আনতে কাজ করেছেন ডা. জুবাইদা পারভিন। মেহেরপুরের তোফাজ্জেল হোসেন ওই প্রকল্পে তার ছেলে এবং নাতির নাম লেখানোর জন্য বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন।

তোফাজ্জেলের স্ত্রী শিরিনা বেগম জানান, প্রতিদিন নিয়ম করে ছেলেদের বিছানা থেকে তোলা, গোসল করানো, কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া আর সহ্য করতে পারছেন না। তিনি এ রোগ নিজের শরীরে কামনা করে তাদের রোগমুক্তি প্রার্থনা করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.