Take a fresh look at your lifestyle.

গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের বাংলাদেশের সফল গবেষনায় ভূয়সী প্রশংসা অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের

0

প্রতিবেদক :
গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধ জাত আবিষ্কারে বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন। যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ মাঠে গত ২০১৬ সাল থেকে চলছে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রতিরোধী জাতের এ গবেষণা কার্যক্রম। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গবেষণা কার্যক্রম সরেজমিনে দেখতে আসেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টার ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (এসিআইএআর) প্রতিনিধিদল। ২০ সদস্যর এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কমিশনের দলনেতা ফিওনাসিমসন ও অস্ট্রেলিয়ান কমিশনার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এসিআইএআর এর দলনেতা প্রফেসর এন্ড্রু কেম্বেল।

বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গমের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার পর থেকে এসিআইএআর ও সিমিটের সহায়তায় বিডাব্লিউএমআরআই ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা করে আসছে। আঞ্চলিক কেন্দ্র, যশোরে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্লাটফর্ম স্থাপন করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় চার হাজার গমের জাত প্রতি বছর বাছাই করা হয়। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত বারি গম ৩৩ ও বিডাব্লিউএমআরআই গম ৩ নামে ২টি ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করেছে। ব্লাস্ট প্রতিরোধীজাত কৃষক মাঠে সম্প্রসারণের ফলে যশোর অঞ্চল ছাড়াও সারা দেশে গমের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে মেহেরপুর জেলায় যেখানে প্রথম ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল সেখানে গত বছরের তুলনায় ৩০০০ হেক্টর বেশি জমিতে গম আবাদ হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধিদল গমের ব্লাস্ট রোগের গবেষণার অগ্রগতি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন। ২০ সদস্যর এ প্রতিনিধি দল বিকেলে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে এসি আই এ আর বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষে প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রম সরেজমিনে দেখে ব্যাপক উৎসাহিত হন।

এসময় অস্ট্রেলিয়ান কমিশনার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এসিআইএআর এর দলনেতা প্রফেসর এন্ড্রু কেম্পবেল বলেন, গমের জন্য ভয়ঙ্কর রোগ হচ্ছে ব্লাস্ট। সেই রোগ প্রতিরোধী জাত আবিষ্কারে এখানকার বিজ্ঞানীরা যে সফল হয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ সফলতা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর কৃষির জন্য অনুকরণীয়।

অস্ট্রেলিয়ান কমিশনের দলনেতা ফিওনাসিমন সন বলেন, বাংলাদেশের গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের এ সফলতায় আমরা আশাবাদী। এখানকার বিজ্ঞানীরা গত প্রায় ৭ বছর ধরে তারা বিভিন্ন দেশের গমের জাত এনে এখানে ট্রায়াল দিয়ে রোগ প্রতিরোধী জাতকে বেছে নিচ্ছেন। যার মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ থেকে চাষিরা নিরাপদে থাকছেন। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী এখানকার গবেষকদের এ সফলতা সারা বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহাম্মাদ রেজাউল কবীর বলেন, ২০১৬ সালে যশোর, মেহেরপুর জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি জেলায় গমে ব্লাস্ট নামক ভয়ঙ্কর ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। এতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে গম আবাদের মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বারি গম ৩৩ ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করে। এর মধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেই থেকেই আমাদের গবেষকরা গমের কার্যকর ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত নিয়ে এখানে একাধিক ট্রায়াল দিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত আকিষ্কারে সফল হয়েছি। যা বর্তমান দেশে নয়, বিদেশের কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছেও প্রশংসিত হচ্ছে।

সিমিট বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে এখন চাষিরা নতুন উদ্ভাবিত ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। চাষিরা এক সময় যখন গম আবাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন এখন তারা পুরোদমে গমের আবাদের দিকে ঝুকে পড়ছেন।

অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধিরা গবেষণার মাঠ পরিদর্শন শেষে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সম্মেলনকক্ষে এ বিষয়ে এক সেমিনারে যোগ দেন। সেমিনারে বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ছাড়াও কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.