Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরের মাটিতে ক্যাপসিকাম চাষ

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
মেহেরপুরের সবজির সুনাম দেশ জুড়ে। নতুন নতুন সবজি চাষেও মেহেরপুরের পরিচিতি বেড়েছে। এবার মেহেরপুরের মাটিতে ‘ক্যাপসিকাম’ চাষ হচ্ছে। বেকার শিক্ষিত যুবকরা উঠে পড়ে লেগেছে ক্যাপসিকাম চাষে। বছর তিনেক আগে মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলায় কয়েকজন শখের বশে বাড়ির আঙিনায় ক্যাপসিকাম চাষ করে। পর্যাপ্ত ক্যাপসিকাম ফলন আসে। আশপাশের লোকজন উদ্বুদ্ধ হয় এই চাষে। ক্যাপসিকাম সবজি এবং স্যুপ রান্নায় বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। সালাদ হিসেবে ব্যবহার করছে শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। মেহেরপুরের প্রেক্ষাপটে নতুন এই সুস্বাদু খাবার খেতে বেশ পছন্দ করছে ফাস্টফুডপ্রেমিরা। এরপর থেকে জেলায় চাষটি জোরদার হয়। সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামে চাষ করছেন দুই সহোদর হাসান শাহরিয়ার লিয়ন ও শাহনেওয়াজ সোহান। তিন বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে ‘গম’ চাষে দেশের সেরা চাষির খেতাব অর্জন করেছিলেন রাধাকান্তপুর গ্রামের দুই চাষি ছাবদার আলী ও আব্দুল আজিজ। তাদের সেই অর্জনের পর ওই সময়ের কৃষিমন্ত্রী রাধাকান্তপুর গ্রাম সফর করেন এবং উন্নত চাষের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ এবং গভীর পাম্প মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন। এই ছাবদার আলী ও আব্দুল আজিজের ছোটভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মাস্টারের তিন সন্তান হাসান শাহরিয়ার লিওন, শাহনেওয়াজ সোহান ও ইউরোপের দেশ চেক রিপাবলিকের জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম প্রধান ক্রিকেটার শাহফরহাদ সোহাস। সময়ের প্রয়োজনেই ক্যাপসিক্যামের চাষ শুরু করেছেন তারা।

হাসান শাহারিয়ার লিওন জানান, এবছর প্রাথমিকভাবে এক একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। সবজির চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আমরা এই চাষে হাত দিয়েছেন। তাদের ছোটভাই সোহাস চেক রিপাবলিক থেকেই অনলাইনে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের পাশাপাশি এই ক্যাপসিক্যাম চাষের পদ্ধতি থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে তদারকি করছে।

ক্যাপসিক্যাম চাষ উদ্যোক্তা শাহনেওয়াজ সোহান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে ‘ফার্মেসি’তে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাষাবাদের জন্য গ্রামে ফিরে আসেন। নিজে ও গ্রামের যুবসমাজের জন্য কিছু করার লক্ষে ‘ইনাট মার্ট’ নামে একটি অনলাইন সাইটে কৃষিপণ্য বাজারজাত শুরু করেন। সেখানে সফলতা পেয়ে ’মাথাল’নামের একটি কৃষি প্রজেক্ট চালু এবং ‘খোয়াড়’ নামে পশুপালন প্রকল্প হাতে নেন। মাথাল-এর আওতায় এবার প্রথমবারের মতো এক একর জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করেন। বলেন, দেশে ও বিদেশে এই সবজির ব্যাপক চাহিদা ও বাজারে ভালো দাম থাকায় নতুন এই ফসল চাষে আমরা নিজেরা কৃষিবিদ ও পুষ্টিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেনে-বুঝে এবং মাটি পরীক্ষা থেকে যাবতীয় কাজ করে এই চাষ শুরু করেছি। এটা আমাদের স্বপ্ন।

ক্যাপসিকাম এক ধরনের মিষ্টি মরিচ। চারা রোপনের দু’মাস পর থেকে ফুল ধরতে শুরু করে। একটি গাছে ৫-৬টি ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে ক্যাপসিক্যামে বেশকিছু (যেমন- জাবপোকা, থ্রিপস পোকা, লালমাকড়) পোকামাকড় আক্রমণ ও রোগের (যেমন- অ্যানথ্রাকনোজ ও বাইট রোগ ইত্যাদি) পাদুর্ভাব হয়। এসব রোগের আক্রমণ হলে কৃষিবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

পুষ্টিমানের দিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান সবজি ক্যাপসিকাম। মানব শরীরের সবজিসহ বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বেশকিছু অসুখ উপশমে বেশ কার্যকর। মাইগ্রেনের ওষুধও বলা হয় ক্যাপসিকামকে। লাল কিংবা সবুজ, যেকোনো ক্যাপসিকামই শরীরে এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

স্থানীয় বাজারে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। ৩ বিঘা জমিতে ২৪শ’ গাছ থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ১শ’ কেজি করে ক্যাপসিকাম সংগ্রহ হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় সবুজ ও নীল রঙের ক্যাপসিক্যাম মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে।

পাশ্ববর্তী রাজাপুর গ্রামের কৃষক নুরুজ্জামান আগামী বছর চাষ করবেন বলে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, নতুন এই ফসলটি এলাকায় কৃষিতে নতুন এক মাত্রা পেল। মরিচের মতো দেখতে কিন্তু মোটা আর বিভিন্ন রঙের। দেখতে খুব ভালো লাগে। খেতেও সুস্বাদু। তিনি আগামীতে চাষ করবেন বলে মাঝেমাঝেই দেখতে আসেন। ক্যাপসিক্যাম চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, নতুন একটি ফল চাষ হয়েছে শুনে এখানে এসেছি। এ ফল আগে আমরা কোনোদিন দেখিনি। বিদেশি এ ফল আমাদের মেহেরপুরে চাষ হচ্ছে দেখে খুবই ভালো লাগছে।

সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভনি জানান, উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। ক্যাপসিকামে ভিটামিন এ, বি, সি, ই ও কে প্রচুর পরিমানে রয়েছে। তবে চাষটি করতে ছত্রাক, থ্রিপস ও মাইটের আক্রমন বেশি। এক্ষত্রে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, যদিও গরমের তিব্রতা পড়ে গেছে। এই মুহুর্তে ক্যাপসিকামের ফলন কম হচ্ছে। তারপরও ক্যাপসিকাম চাষে মেহেরপুরের অর্থনীতিতে অবদান রাখার সম্ভাবনা আছে। আমদানি করা ক্যাপসিকামের তুলনায় আমাদের উৎপাদিত ক্যাপসিকামের গুণগত মান অনেক ভালো। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীতে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম চাষ বাড়াতে পরামর্শ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.