Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে কাদাখোঁচা নিয়ে গেল শৈশবে

ব্যতিক্রমী ভ্রমণ

0

প্রতিবেদক :
সকাল ৮টা থেকে অভয়নগরের নওয়াপাড়া ভৈরব নদের তীরে একে একে জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী মানুষ। সকলের গায়ে একই পোশাক। করছেন ভাব বিনিময়। তুলছেন ছবি। আর তীরে নোঙ্গর করা আছে ছোট-বড় দুটি সুসজ্জিত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। একে একে সকলে উঠলেন ট্রলারে। ঘড়ির কাটায় ঠিক ১০টা বাজার সাথে সাথে ছেড়ে যায় ট্রলার দুটি। আর দুপুর ৩টায় খুলনার বটিয়াঘাঠায় রূপসা নদীর চরে গিয়ে থামে। জাহাজ থামার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি। নবীন-প্রবীণ সব মিলেমিশে করছেন কাদা মাখামাখি। সকলে যেন ফিরে গেছেন শিশুকালে। খেলছেন কাবাডিও। শৈশবের এমন স্মৃতিতে ফিরতে সারাবছর এই দিনটির দিকে চেয়ে থাকে কাদাখোঁচার সদস্যরা।

কাদাখোঁচা যশোরের নওয়াপাড়ার সবশ্রেণী মানুষের নিয়ে একটি ভ্রমণপ্রেমী সংগঠন। শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যেতে ২০১২ সালে কাদাখোঁচা নামে এই ব্যতিক্রমী ভ্রমণের উদ্যোগ নেয় যশোরের অভয়নগরের কয়েকজন যুবক। সেবার ১৬ সদস্য নিয়ে এর পথচলা শুরু হয়। সে সময় অনেকে এটিকে পাগলামী ভাবলেও এখন ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সকলে। প্রতিবছরই বাড়ছে কাদাখোঁচার সদস্য সংখ্যা। একযুগে সেই সংখ্যা প্রায় তিনশ জনে এসে ঠেকেছে।

শৈশবের মধুর স্মৃতিতে ফিরে যান কাদাখোঁচার সদস্যরা, ছবি : কপোতাক্ষ

যান্ত্রিকজীবন থেকে বেরিয়ে উন্মুক্ত চিন্তা ও মাটির সংস্পর্শ পেতে এই আয়োজন বলে জানালেন আয়োজকরা। এবার একযুগ পুর্তি উপলক্ষে ভ্রমণের আগে বেলুন ফেস্টুন ওড়ানো, কেক কাটা, বর্ণাঢ্য র‌্যালিসহ নানা আয়োজন করে কাদাখোঁচার সদস্যরা।

ষাট উর্ধ্ব আলতাফ হোসেন। পেশায় ব্যবসায়ী। সেই কবে জীবন থেকে শৈশব ছুটি নিয়েছে। কাজ ও নাগরিক ব্যস্ততায় ভুলতে বসেছিলেন নিজের মনের ভেতরে পুষে রাখা সবুজ শৈশব। তাইতো সুযোগ পেয়েই এদিন ভুলে যান তার বয়স। তার মতো অনেকেই নবীন-প্রবীণের বয়সের সংখ্যা ভুলে যেয়ে মাতেন কাঁদা ছুড়াছুরিতে। তিনি বলেন, এই আয়োজনে যখনই মাতি তখন আমি শৈশবে ফিরে যাই। মনে হয় পূর্ণ জীবন লাভ করলাম। সংগঠনের সদস্য আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে, ফলে আমরা শৈশব জীবন ফিরে পাইনে। প্রতিবছর আমরা এই দিনটার জন্যি বসে থাকি। কখন আমরা শৈশবে ফিরে যাব। স¤্রাট হোসেন নামে আরেক সদস্য বলেন, এ অন্যরকম উৎসব। নবীন-প্রবীণ একসাথে ছুটছে শৈশবের টানে। জানা নেই গন্তব্য। নেচে গেয়ে ট্রলারে ভেসে চলেছি নদীর বুক চিরে। সবাই যেন হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির মাঝে। একদিনের জন্য ফিরে যেতে চান শৈশবের সেই মধুর স্মৃতিতে।

সংগঠনের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি বলেন, কাজের সুবাদে একেকজন একেক জায়গায় থাকেন। সেই কবে জীবন থেকে শৈশব ছুটি নিয়েছে। কাজ ও নাগরিক ব্যস্ততা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছেন সবাই। সময়-সুযোগ হয়না সবার একসাথে হওয়ার। সবাইকে একসাথে করে কাদাখোঁচা নামে এই সংগঠনটি। মূলত যান্ত্রিকজীবন থেকে বেরিয়ে উন্মুক্ত চিন্তা ও মাটির সংস্পর্শ পেতে এই আয়োজন। যার ফলে একদিনের জন্য হলেও তারা সবাই চলে যান গ্রাম প্রকৃতিসহ মাটির টানে। মেতে উঠেন শৈশবের সকল খেলাধুলাতে। আর একযুগ ধরে চলা এই ভ্রমণ যুবসমাজের জন্য ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, প্রথমে এই সংগঠনটির কার্যক্রমে সবাই পাগলামি বলতো। এখন এটি নওয়াপাড়াতে ইতিহাস ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাথে সাথে এই যুবসমাজকে মাদকমুক্ত করতে সংগঠিত করতে পেরেছে। অস্থির সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যুবসমাজ যখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখনই এই সংগঠন যে ভূমিকা রাখছে এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.