Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা চার ঝুঁকিতে

তিন বছরে ৮২৯ অগ্নিকান্ড, ক্ষতি সাড়ে ১০ কোটি টাকা

0

প্রতিবেদক :
চারটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যশোরের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা। বড় কোনো আগুনে এসব ঝুঁকি মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা বৃটিশ ভারতের অন্যতম প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ এ জেলাটির নেই। ঝুঁকি চারটি হচ্ছে : অপরিকল্পিত নগরায়ন ও সুউচ্চ ভবন গড়ে ওঠা, সরু রাস্তা, পুকুর-জলাশয় ভরাট হওয়ায় পানির উৎস না থাকা এবং প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রির অপর্যাপ্ততা।

যশোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ জানান, যশোর শহর জুড়ে অপরিকল্পিত বাজার ও মার্কেট গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে বড়বাজার ও কালেক্টরেট মার্কেট অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখানে বড় ধরনের আগুন লাগলে বিপর্যয় এড়ানো অনেক কষ্টকর ব্যাপার হবে। কারণ আশেপাশে পানির তেমন উৎস নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে পারবে না। শহরের অনেক রাস্তা এমন সরু যে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

যশোরে অগ্নি নির্বাপন সামগ্রির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। সেখান থেকে চাহিদা পেয়েছি। টিটিএল শুধুমাত্র বিভাগীয় শহরে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে হাইটেক পার্ক থাকায় যশোরে দেয়ার ব্যাপারটি বিবেচনায় নেয়া হবে।

– শাহানারা খাতুন, অতিরিক্ত সচিব, অগ্নি অনু বিভাগ, সুরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তিনি জানান, এখানে এমন সব বড় বড় ভবন গড়ে উঠেছে যার টপ ফ্লোর বা উপরের দিকে আগুন লাগলে নেভানোর মতো সক্ষমতা এই মুহূর্তে নেই। বিশেষ করে একটি অভিজাত হোটেল, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কসহ বেশ কয়েকটি ১২-১৪ তলা ভবন রয়েছে, যেখানে আগুন নেভানো অত্যন্ত কঠিন। আবার প্রাচীন এয়ারপোর্টের জন্য যে ধরনের ফোম টেন্ডার লাগে, সেটাও এখানে নেই। বহুতল ভবনের আগুন নেভানোর জন্য টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল), উদ্ধার কাজের পরিপূর্ণ ইমার্জেন্সি টেন্ডার (ইটি) এবং বড় পানিবাহী গাড়ি এখানে নেই। এসব অপর্যাপ্ততার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছি। এসব পাওয়া গেলে এই জেলাকে আগুনের উদ্ধার কার্যক্রমের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়া যাবে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন বড় ধরনের আগুন লাগলে বিপর্যয় এড়ানো অনেক কষ্টকর ব্যাপার হবে, ছবি : কপোতাক্ষ

যশোর পৌরসভার উপ-সহকারি প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, শহরের পুকুর-জলাশয় ভরাট করে বাড়ি তৈরির জন্য ৬৫টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে এসব আবেদনের একটিও অনুমোদন দেয়া হয়নি। আর সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী এখন থেকে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ছোলজার রহমান জানান, যশোর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা রয়েছে ৪ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর। কিন্তু শহরে ৮-১৪ তলা ভবন নির্মাণ হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পুকুর জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবার নদীগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। সেখান থেকে পানি পাওয়া যাবে না। পৌরসভাগুলো যেসব বাড়ি অনুমোদন দিচ্ছে সেখানে চওড়া রাস্তা রাখছে না। ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কিছইু করা থাকছে না। কারণ তারা গাড়ি নিয়ে সেখানে যেতে পারছে না। এতে প্রতিবছর অগ্নিকান্ডে ক্ষতির হার বাড়ছে। অগ্নিকান্ড থেকে বাঁচতে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন গড়ে তুলতে হবে।

আগুন লাগলে বিপর্যয় এড়াতে যশোর শহরে পানির তেমন উৎস নেই, ছবি : কপোতাক্ষ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অগ্নি অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা খাতুন মোবাইলে বলেন, যশোরে অগ্নি নির্বাপন সামগ্রির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। সেখান থেকে চাহিদা পেয়েছি। টিটিএল শুধুমাত্র বিভাগীয় শহরে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে হাইটেক পার্ক থাকায় যশোরে দেয়ার ব্যাপারটি বিবেচনায় নেয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে গত তিন বছরে যশোরে ৮২৯টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৭ টাকা। এর মধ্যে ২০২০ সালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৬১টি। যার আর্থিক ক্ষতি ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ টাকা। ২০২১ সালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৪৬টি। আর্থিক ক্ষতি ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৮শ’ টাকা এবং ২০২২ সালে যশোর জেলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ৩২২টি। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ২ কোটি ১১ হাজার টাকা।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.