Take a fresh look at your lifestyle.

বেনাপোল বন্দরে চালু হলো ই-গেট

১৮ সেকেন্ডেই ই-পাসপোর্টধারীরা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করতে পেরে খুশি

0

প্রতিবেদক :
বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে। ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক গেট বা ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। আজ শনিবার (৪ মার্চ) বিকাল ৫টায় এসব গেট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আগে যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা ইমিগ্রেশন শেষ করতে ভোগান্তির মুখে পড়তে হতো, এখন মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই ই-পাসপোর্টধারী নাগরিকেরা ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি না থাকায় ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে সহজে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পেরে খুশি তারা।

সূত্র জানায়, ইলেকট্রনিক এসব গেটে প্রথমে ই-পাসপোর্টধারীর যাত্রীর ছবি, তথ্য এবং বারকোড থাকা পৃষ্ঠাটি স্ক্যান হয়ে তথ্যগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যাচাই হবে। সব ঠিক থাকলে গেটের প্রথম ধাপ খুলে যাবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সরাসরি শনাক্তকরণ ক্যামেরার মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর তাৎক্ষণিক মুখমণ্ডল মিলে গেলেই খুলে যাবে দ্বিতীয় গেটটিও। আর সার্ভার এবং সিস্টেম সব ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ১৮ সেকেন্ডের মধ্যেই একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন শেষ হবে।

এই সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন

কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টটি গেইটের নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করে

আঙুলের ছাপ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইট খুলে যাবে।

-আহসান হাবীব, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। ঈদ ও পূজার সময়ে এই সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ে। লাইনে না দাঁড়িয়ে আগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে দালালচক্র যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা লেনদেন করে। এতে যাত্রীরা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হন। যাত্রীসেবা সহজ ও নিরাপদ করতে বেনাপোল স্থলবন্দরে ৪টি ই-গেইট স্থাপন করা হয়েছে। এর দুটি ভারত থকে ফেরা ও দুটি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ই-গেট দিয়ে পার হওয়া মনিরুজ্জামান বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমি বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করি। এই প্রথমবার ই-গেটের মাধ্যমে পাসপোর্টের তথ্য যাচাই কার্যক্রম শেষ করতে এক মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। কিন্তু ভিসায় সিল মারতে আগের মতোই ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লেগেছে। ভিড় থাকলে তো লাইনে দাঁড়ালে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা লেগে যায়।

বিকালে ই-গেট উদ্বোধনের পর ই পাসপোর্টধারী যাত্রীদের জন্যে গেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর একে একে অসংখ্য যাত্রী গেটে ই-পাসপোর্ট দেখিয়ে গেট পার হয়ে যান। পরে ভিসা যাচাইয়ের জন্যে তারা কাউন্টারে যান। সেখান থেকে পাসপোর্ট বইয়ে সিল মেরে দেওয়া হয়।

ই-গেট উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, শুধু ই পাসপোর্ট ই-গেট নয়; ই-ভিসাতেও আমরা চলে যাচ্ছি। বাংলাদেশ হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে এমআরপি এরপর ই-পাসপোর্টে চলে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে যাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে আজ সবার হাতে হাতে ই-পাসপোর্ট। একটা সময়ে আমরা হাতের লেখা পাসপোর্ট বাদ দিয়ে এমআরপিওতে যাত্রা করেছিলাম। এখন শেখ হাসিনার হাত দিয়েই ই-পাসপোর্টে চলে গেছি।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, ই-সেবা চালুর কারণে আগের মতো দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টের তথ্য যাচাইয়ের ঝামেলা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন তারা।

যাত্রীসেবা সহজ ও নিরাপদ করতে বেনাপোল স্থলবন্দরে ৪টি ই-গেইট স্থাপন করা হয়েছে, ছবি : কপোতাক্ষ

ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এই সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টটি গেইটের নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করে আঙুলের ছাপ দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইট খুলে যাবে। এতে গমনাগম নিরাপদ হবে। মানুষের ভোগান্তি কমবে। নাগরিক সেবা সহজ হবে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের শুধু যশোর কার্যালয় থেকে একলাখ ৭০ হাজার মানুষ ই-পাসপোর্টের আওতায় এসেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও ই-পাসপোর্টের আওতায় আসেনি। যে কারণে ই-গেইট সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতির সেবা কার্যক্রমও সচল থাকবে। দেশের সব পাসপার্টধারী যাত্রীদের ই-পাসপোর্টের আওতায় আসতে কত সময় লাগতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান কুতুব বলেন, বর্তমানে দেশে সব জেলা পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পাসপোর্টধারী সব মানুষকে ই-পাসপোর্টের আওতায় আসতে সময় লাগবে। এখন সবাইকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.