Take a fresh look at your lifestyle.

দু’যুগেও শনাক্ত হলো না উদীচীর অনুষ্ঠানে হত্যাযজ্ঞের ঘাতকেরা

0

প্রতিবেদক :
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘাতকরা দু’যুগেও শনাক্ত হলো না। দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার বিচারিক কার্যক্রম। শুনানি শেষে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম কবে শুরু হবে এখনও জানে না কেউ। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিবছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। এমনই পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৬ মার্চ) নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ২৪ বছর পূর্তি হচ্ছে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী দু’টি বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ আহত হন। নিহতরা হলেন, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, উদীচী হত্যা মামলাটি উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু আজও এই শুনানি হয়নি। আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হলে নি¤œ আদালতে বিচার কাজ শুরু সম্ভব নয়।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে একটি পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এত বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। আমি মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবেই।

উদীচীর সম্মেলনে সেই বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যস্ত হয়। তদস্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামলার এমন রায়ে যশোরসহ সারাদেশে প্রগতিশীল ঘরানার মানুষ বিস্মিত হন।

এদিকে, দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। তার ওপর ভিত্তি করে এ মামলার পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। মুফতি হান্নানের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দির পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

২০১০ সালের ৮ জুন ওই আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। সিআইডির ত্রটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রæত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, উদীচী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে শনিবার থেকে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়ে সংগঠনটি। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার! এই লজ্জা ও অপমান কার’ এই শ্লোগানে গত শনিবার তিনদিনের কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির প্রথম দিন শনিবার টাউন হল ময়দানে ২৪ জন চিত্রশিল্পী রঙ তুলিতে উদীচী হত্যাকাণ্ডের সেই দিনের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন। ৫ মার্চ রবিবার উদীচী কার্যালয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আজ ৬ মার্চ সোমবার টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শহিদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সন্ধ্যায় প্রতিবাদী মিছিল, আলোচনা ও মশাল প্রজ্বালন করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.