যশোরে জনতা ব্যাংকের লকারকাণ্ড : নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন খোদ এমপির
গচ্ছিত সম্পত্তি ঠিক আছে কিনা জানতে মঙ্গলবার লকারভাড়াটিয়ারা ব্যাংকে খোঁজখবর নিলেন
প্রতিবেদক :
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায় তার স্ত্রী নিয়তি রানী রায়কে নিয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখায় যান সোমবার দুপুরে। নিয়তি রানীর নামে ভাড়া নেওয়া ব্যাংকের লকার খুলে সংরক্ষিত মালমাল নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ব্যাংকে যান। ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী নিয়তি রানীর লকার না খুলে তাদের ছেলে রাজীব রায়ের নামে ভাড়া নেওয়া লকার খুলে ফেলেন। দুটো চাবি ছাড়া লকার খোলার কথা না থাকলেও একটি চাবিতে খুলে যাওয়ায় ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্য। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়েছে। এই সরকারি ব্যাংকের গ্রাহকের লকারের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঐ সংসদ সদস্য। এ নিয়ে শহর জুড়েই তোলপাড় চলছে। বিষয়টি জানাজানির পর এই শাখাতে লকার ভাড়াটিয়ারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। নিজেদের গচ্ছিত সম্পত্তি ঠিক আছে কিনা আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকাল থেকে কয়েকজন লকারভাড়াটিয়া ব্যাংকে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্যাংকের একটি সূত্র। গ্রাহকের ভাড়া করা লকারের নিরাপত্তা ও সেবা নিয়ে তোলা অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহিতারা।
পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে তাদের পরিবারের
নামে লকার ভাড়া নেওয়া। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে।
একটা তাদের কাছে, অন্যটি ব্যাংকের কাছে থাকে।
কিন্তু চাবি ছাড়াই ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে?
-সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়
তবে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখার এজিএম ইমরান হোসেন শামীম বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। ব্যাংকের লকারে ত্রুটি ছিল। ত্রুটি থাকলেও কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। এটি নিয়ে সংসদ মহোদয়ের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি ছিল। পরে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।
জানা যায়, যশোর শহরের জেস টাওয়ারে জনতা ব্যাংকের যশোর প্রধান শাখার দুটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে সদস্য সদস্য রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানী রায় ও ছেলে রাজীব রায়ের নামে। সোমবার দুপুরে রনজিৎ রায় তার স্ত্রী নিয়তি রায়কে নিয়ে ব্যাংকে লকার খুলতে যান। এ সময় ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী সংসদ সদস্যের স্ত্রী নিয়তি রানীর লকার না খুলে তাদের ছেলে রাজীব রায়ের নামে বরাদ্দকৃত লকার খুলে ফেলেন। এ সময় ঐ লকারের নিরাপত্তা নেই দাবি করে গচ্ছিত মালমাল নিজের জিম্মায় নিতে চান রনজিত রায়। ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা এজিএম ইমরান হোসেন লিখিত দেওয়ার কথা বলেন। তখন সংসদ সদস্য খাতায় স্বাক্ষর করে নিতে বলেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা গড়িমসি করেন। এতে সময়ক্ষেপন হওয়ায় সংসদ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মুঠোফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালমাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।
লকারের তালায় কোনো সমস্যা না থাকলে
একটা চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব নয়।
-অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস, মহাব্যবস্থাপক, জনতা ব্যাংক
এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় ব্যাংকে হইচই পড়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংকে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মুঠোফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালামাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।
তবে সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মঙ্গলবার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে তাদের পরিবারের নামে লকার ভাড়া নেওয়া। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। একটা তাদের কাছে, অন্যটি ব্যাংকের কাছে থাকে। কিন্তু চাবি ছাড়াই ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে? ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করে মালামাল নিতে চাইলে লিখিত দিতে বলেন। খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিতে বললে তারা সম্মতি না দিয়ে আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। তখন তিনি রাগ করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তিনি ব্যাংকের কাউকে ধাক্কা দেননি।
এদিকে সংসদ সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রাথমিক তদন্ত করতে আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপুরে যশোরে এসেছিলেন খুলনা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার হেড অফিস থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যশোরের প্রধান শাখায় গিয়ে উদ্ভূত ঘটনা জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে। এরপর চূড়ান্ত তদন্ত দল ঢাকা থেকে পাঠানো হবে। একটি চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকারের তালায় কোনো সমস্যা না থাকলে একটা চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব নয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যশোরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখায় লকার ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ব্যাংকে ছোট ও বড় দুই ধরনের লকার ভাড়া নেওয়া যায়। ছোট লকারের বার্ষিক ভাড়া ২ হাজার ৩০০ এবং বড় লকারের ৪ হাজার ৬০০। লকার খোলার জন্য ব্যাংক ও বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তির কাছে দুটি চাবি থাকে। লকারে দুই দফা তালা থাকে। লকার খুলতে হলে দুইপক্ষের দুটি চাবিই তালায় প্রবেশ করাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ইচ্ছে করলেই লকার খুলতে পারবেন না।