Take a fresh look at your lifestyle.

খাওয়া হলোনা শ্রেয়ার, বাবার দোকানের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের ইট মাথায় পড়ে করুণ মৃত্যু

0

প্রতিবেদক :
যশোরের চৌগাছা শহরের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ৫ম তলা থেকে ইট ধ্বসে পড়ে শ্রেয়া বালা (৭) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার মা বুলি বালা আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। শ্রেয়া চৌগাছা শহরের রাগিব আহসান নিহাল আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী এবং শহরের ৪নং ওয়ার্ডের নিরিবিলিপাড়ার ভাড়াটিয়া শংকর কুমার বালা ও বুলি বালা দম্পতির একমাত্র সন্তান। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলায়। শ্রেয়ার বাবা দীর্ঘদিন চৌগাছা শহরে বসবাস করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসালয় ও চাঁদশীর (ক্ষত) চিকিৎসালয় পরিচালনা করেন।

আজ শনিবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে চৌগাছা শহরের পুরাতন মাইক্রোবাসস্ট্যান্ডে নির্মাণাধীন জিল্লুর রহমানের নির্মাণাধীন ৫তলা ভবনের ৫ম তলা থেকে ইট পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনটির সামনে সড়কের বিপরীতপাশেই শ্রেয়ার বাবার চিকিৎসালয়।

নির্মাণাধীন ভবনের ৫ম তলা থেকে ধ্বসে পড়া ইটেই পড়ে নিভে গেল শ্রেয়ার জীবন, ছবি : কপোতাক্ষ

প্রত্যক্ষদর্শী শাহিনুর রহমান জানান, আমরা তিনজন ঘটনাস্থলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় বাচ্চাটি ও তার মা স্কুল থেকে এসে সেখান দিয়ে বাবার দোকানে যাচ্ছিল। হঠাৎই উপর থেকে গাঁথুনি করা কয়েকটি ইট ধ্বসে পড়লে প্রথমে মেয়েটির মা মাটিতে পড়ে যান। পরপরই বাচ্চাটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা দ্রæত উদ্ধার করি। তখন বাচ্চাটি রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। উদ্ধারের পর দ্রæত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে ১২টার দিকে শ্রেয়ার মৃত্যু হয়। শ্রেয়ার মা’কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেয়া হয়।

শ্রেয়ার মা বুলি বালা জানান, আমাদের বিয়ের ১৪ বছর পর অনেক সাধনার পর শ্রেয়ার জন্ম। ওকে আমি প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাই। সেখানে ক্লাস এবং প্রাইভেট পড়ার পর কিছু সময় খেলাধুলা করে বাড়িতে ফেরে। তবে শনিবার প্রাইভেট শেষ করেই শ্রেয়া আমাকে বলে, মা আমার খুব খিদে পেয়েছে। চলো বাবার দোকান থেকে টাকা নিয়ে কিছু খেয়ে তারপর বাড়ি যাব। আমরা ওর বাবার দোকানের প্রায় সামনে পৌঁছে দেখি দোকান বন্ধ। তখন কিছুক্ষণের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকি। এসময়ই উপর থেকে কয়েকটি ইট পড়লে আমি নিজেও পড়ে যাই। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করতেই দেখি আমার কলিজার টুকরা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পরে আমাকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে আমার মা জননীকে যশোর নিয়ে যায়।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি এখন কি নিয়ে থাকবো?’ আমার মেয়ে যে না খেয়েই চলে গেল…।

নির্মাণাধীন এই ভবন থেকে ইট পড়ে করুণ মৃত্যু হলো শ্রেয়ার, ছবি : কপোতাক্ষ

ঘটনার পরপরই চৌগাছা থানা পুলিশের একটি দল ও চৌগাছার পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে পৌরসভার কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম বলেন, ৫ম তলায় মেশিনে তৈরি ইটের পাঁচ ইঞ্চি গাঁথুনি ছিল। সেখানে একজন শ্রমিক কাজ করছিল। ধারনা করা হচ্ছে ঐ শ্রমিকের পেছন দিকে ধাক্কা লেগে দেয়ালটি ধ্বসে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

শ্রেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, শ্রেয়া আমার স্কুলের ২য় শ্রেণির খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। ও ক্লাসে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে সবসময় ২য় বা ৩য় হতো। আমি যখন বলতাম প্রথম হতে হবে, তখন শুধুই মুচকি হাসতো। তিনি বলেন, শ্রেয়া শুক্রবারও স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। শনিবারও স্কুল থেকেই ওর মা’র সাথে ফিরছিল।

চৌগাছা থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান জানান, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টির পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.