নড়াইলে উদীচীর অনুষ্ঠানে পেট্রোলবোমা হামলার প্রতিবাদে যশোরে মানববন্ধন
প্রতিবেদক :
নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনবার পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করার ঘটনার তিনদিন পার হলেও পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। এই ঘটনায় সংগঠনটি থানায় অভিযোগ বা মামলা করেনি। ঘটনাটি পরিকল্পিত দাবি করে পুলিশ বলছে, আয়োজকদের বিব্রত করার উদ্দেশ্য ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তথাকথিত পেট্রোলবোমা-নাশকতা বা উগ্রবাদী হামলা না। এদিকে, হামলাকারীদের জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে যশোরে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটির যশোর জেলা সংসদ।
নড়াগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন জানি এই ঘটনাটি আপনারা (সাংবাদিক) বড় করে দেখছেন। এই অনুষ্ঠানটি ব্যক্তিআক্রোশে পন্ড করার জন্য আয়োজকদের বিব্রত করার উদ্দেশ্য ঘটানো হয়েছে। তথাকথিত পেট্রোলবোমা-নাশকতা বা উগ্রবাদি কার্যক্রম হিসাবে দেখছি না। আর এমনটি না বলেই আয়োজকরা এখনও কোনো অভিযোগ বা মামলা করেনি। তারপরও পুলিশ এর ভিতরে ঢুকে ষড়যন্ত্র আছে কিনা তদন্ত করছে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে ব্যক্তিআক্রোশে কেউ ঘটাতে পারে। তারপরও এটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দেখছি।
উদীচী বড়দিয়া শাখা সংসদের উপদেষ্টা বি এম বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠান চলাকালে দুবার এবং অনুষ্ঠানের শেষে আরেকবার পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আসা বাউলশিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন। এ উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের মাঠের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিজেদের রক্ষা করতে এমন মন্তব্য করছে। পুলিশ তো এখনও কাউকে আটক ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করুক। করে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতার করুক।
গত শনিবার রাতে নড়াইলের বড়দিয়ায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রথমদিনে মঞ্চে পেট্রোলবোমা হামলার ঘটনা ঘটে। কালিয়া উপজেলার বড়দিয়ায় শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটেছে। দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার ও রোববার দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে উদীচী বড়দিয়া শাখা সংসদ। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন পাঁচটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মঞ্চে অতিথিদের সঙ্গে কয়েকজন বাউলশিল্পীও ছিলেন। অনুষ্ঠানে এক হাজারেরও বেশি দর্শকশ্রোতা ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে থেকে মঞ্চের পেছনের দিকে তরল পদার্থভর্তি একটি কাচের বোতল ছুঁড়ে মারা হয়। বোতলটি ফাঁকা জায়গায় পড়ে আগুন ধরে যায়। এতে পাশের গাছপালা দগ্ধ হয়। তবে এ সময় কোনো শব্দ হয়নি। এ ঘটনায় অনুষ্ঠানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থিত লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আবার অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই দিক থেকে আবার মঞ্চের সামনে আরেকটি বোতল ছুঁড়ে মারা হয়। বোতলটি মঞ্চের সামনে পড়ে। তবে বিস্ফোরিত হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন আবার ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু করা হয় এবং রাত সাড়ে ১০টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবার মঞ্চে আরেকটি বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মঞ্চের কিছু অংশ পুড়ে যায়। অনুষ্ঠান যারা করতে দিতে চায় না, তারা পরিকল্পিতভাবে তিন দফা অনুষ্ঠানে বোমা নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেন উদীচী বড়দিয়া শাখা সংসদের সভাপতি দিলরুবা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, প্রথমদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে চলে আসার পর তারা মঞ্চে বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা বিস্ফোরিত হলে অনেক লোক হতাহত হতে পারত।
এদিকে, নড়াইলের বড়দিয়ায় উদীচীর উৎসবে বোমা হামলার প্রতিবাদে উদীচী যশোরের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করে অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সংস্কৃতিকর্মীসহ সাধারণ পথচারিরাও হাতে হাত ধরে অংশ নেয় এই অহিংস কর্মসূচিতে। উদীচী যশোরের সহসভাপতি আমিনুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুন অর রশীদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি যশোরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, মাহবুবুর রহমান মজনু, চাঁদের হাট যশোরের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, উদীচী যশোরের সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজেদ রহমান, ছড়াকার ও সাংবাদিক রিমন খান, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক প্রণব দাস প্রমুখ।