যশোরে শেষ হলো চাঁদের হাটের চিত্রপ্রদর্শনী
২৬ শিল্পীর হাতে ফুটে উঠে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার নানা দৃশ্যপট
প্রতিবেদক :
যশোরে শেষ হলো তিনদিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে এ চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করে জাতীয় শিশু কিশোর ও যুব কল্যাণ সংগঠন চাঁদের হাট যশোর। এতে স্থান পায় দেশের ২৬ বরেণ্য চিত্রশিল্পীর ২৬টি ছবি। এসব ছবিতে ফুটে ওঠে আবহমান বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ ভিন্ন উৎসব-পার্বণ ও ষড়ঋতুর নান্দনিকতা।
এদিকে, চিত্রপ্রদর্শনীর শেষদিনে আরও ৩টি ছবি বিক্রি হয়েছে। এই নিয়ে চিত্রপ্রদর্শনীর মোট ৯টি ছবি বিক্রি হলো, যা যশোরের কোনো চিত্রপ্রদর্শনীর বিক্রি রেকর্ড।
চিত্রশিল্পী উৎপল বিশ্বাস রন্তু বলেন, মনের ভেতরে যে বীণা বাজে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এসব চিত্রকর্মে। এই চর্চা দেশে এখন খুবই কম। এসব চিত্রকর্ম ছড়িয়ে দিতে পারলে, মানুষের মনের মাঝে যে সুকুমারবৃত্তি সুপ্ত আছে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। মানুষের মধ্যে যে, কূপমণ্ডূকতা, সাম্প্রদায়িকতা ও জাতি বিদ্বেষ আছে তা দূর হবে। রায়হান উদ্দিন নামে আরেক চিত্রশিল্পী চিত্রকর্মের নাম দিয়েছেন মায়ের মুখের বুলি। চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন মা তার সন্তানকে উপরে তুলে মায়ের ভাষা শিখাচ্ছে। পাশেই উড়ে যাচ্ছে কয়েকটি সাদা কবুতর। কৃষি গৌতম তার চিত্রকর্মের নাম দিয়েছেন কৃষিবাবুর প্রভাতফেরি। তার চিত্রকর্মে দেখা যাচ্ছে একযুবক দুই কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে নিয়ে যাচ্ছে শ্রদ্ধা জানাতে। পাশেই আবহমান গ্রামবাংলার এক চাষি কাঁধে বাঁকে করে মাটির পাত্রতে খেজুর রস নিয়ে যাচ্ছে। সৌমিত্র মোস্তরী নামে এক শিল্পী ফুঁটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি জানান, ৫২-র ভাষা আন্দোলনে একুশে প্রকৃতিতে রক্ত ঝরেছিল। সেদিন ফুটেছিল লাল রক্ত পলাশ। তার দৃশ্যে সেই ভাষা সংগ্রামের যে লাল রক্ত ঝরেছিল, সেটা প্রকৃতিতে অগ্নিঝরা পলাশের সেই প্রকৃতি দৃশ্য ফুটে উঠেছে চিত্রকর্মের মাধ্যমে। তিনদিনব্যাপী এই চিত্রপ্রদর্শনীতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদেন ভিড় লক্ষ করা গেছে।
এদিকে আজ বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। এসময় তিনি বলেন, সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রসর জেলা যশোর। শিল্পের নানা মাধ্যমে শিল্পীরা মানুষের জীবনকে উৎকীর্ণ করেন। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার জন্য লড়াই করছে বিশ্বের শিল্পীরা। এ দেশের শিল্পীদের সংগ্রামও বিশ্বের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াইয়ে শিল্পীরা আজও প্রথমসারির যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তিনি বলেন, চাঁদের হাটের এই আর্ট ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের স্বাধীনতার নানা দৃশ্যপট উঠে এসেছে। উঠে এসেছে নারী জাগরণের নানা জয়গান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার। চাঁদের হাঁটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী কৃষি গৌতম।
এসময় অংশগ্রহণকারী ২৬ চিত্রশিল্পীদের মধ্যে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণের প্রকাশক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি দীপংকর দাস রতন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট আমিরুল ইসলাম রন্টু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার তিনদিনব্যাপী এই চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।