Take a fresh look at your lifestyle.

গাছে গাছে দোল খাচ্ছে সজনে ডাটা

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
কুমড়ো ফুলে ফুলে, নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা। আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি, খোকা কবে তুই আসবি? কবে তোর ছুটি? কবির কবিতার লাইনগুলো বর্তমানে গ্রামবাংলার চিরায়ত রুপে মেহেরপুরে ফুটে উঠেছে। চৈত্র মাস এলেই ছেলেকে সজনের ডাটা খাওয়ানোর জন্য এখনও অনেক মা এভাবেই অপেক্ষা করে। মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সজিনা গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাটা। প্রতিটি সজনে গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে ডাটার ভারে।

শীতের শেষে গরমে মেহেরপুরে এখনও মৌসুমী ও সুস্বাদু সবজি সজনের ডাটার জনপ্রিয়তা কমেনি। বহুগুণে গুণান্বিত সজনে ডাটা। মেহেরপুর জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সজনের গাছ আছে। বাজার দাম এবং চাহিদার কারণে অনেকে এখন সজনে ডাটা চাষ করছে। সবজি হিসাবে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের ডাটা চাষ অনেক লাভজনক। বাড়ির আনাচে-কানাচে বা পতিত জমিতে এই গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়।

এই মৌসুমে সবচেয়ে মুখরোচক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তরকারি বলতে সজিনা ডাটা। বর্তমানে কাঁচাবাজারের তালিকায় সজিনার ডাটা নেই এমন ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। এবার প্রতিটি গাছেই সজনের ডাটা দোল খাচ্ছে । সকলেই নিজের চাহিদা পূরণের পরও ডাটা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে।

ফুল থেকে লকলকে কচি ডাটা যখন বাজারে ওঠে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাটা যখন পরিপূর্ণ বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এখন ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসছে প্রচুর। সজিনা উৎপাদনে কোনো খরচ নেই। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজিনা ডাটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই লাভ।

তবে জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজিনার গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নাই।

প্রতিটি সজনে গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে ডাটার ভারে, ছবি : কপোতাক্ষ

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের সজনেচাষি মিন্টু মিয়া জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাঠে জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চারপাশে ১০টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছ লাগাতে কোনো খরচ হয়নি তার। তিনি প্রতি মৌসুমে ৬-৭ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করে থাকেন। এবার গাছে যে পরিমান ফলন এসেছে তাতে তিনি আশাবাদি ১০ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করবেন।

একই গ্রামের আরেক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, এখন সজিনা গাছে থোকায় থোকায় ডাটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাটায় পরিপূর্ণ। তিনি মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন। তবে যে পরিমানে সজিনা ডাটা ধরেছে তা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৭-৮ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করবেন। তিনি আরও জানান, সজিনা চাষে কোনো খরচ হয়না। গাছের ডাল লাগালেই হয়। ডাল লাগানোর পর কয়েকদিন গোড়ায় পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। তবে সজিনার প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। ঝড়ে ডাল ভেঙ্গে যায় এমনকি গাছ উপড়ে পড়ে।

সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় সজিনা গাছ আছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শংকর কুমার মজুমদার জানান, দেশে সজনে সচারাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। মেহেরপুরে আগে বারমাসী জাতের সজনে আবাদ কম হলেও এখন তা বেড়েছে। সজনে গাছের জন্য কোনো চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। তাই কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের মাঝে সজিনা চারা বিতরন করে সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.