Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে রমজানে রোজাদারদের শীতল পানির ফেরিওয়ালা আইডিয়া

0

প্রতিবেদক :
বিকাল ৫টা। ভ্যানের উপরে বিশাল ট্যাঙ্কিতে খাবার পানি। পাশে রাখা একটি সাউন্ড বক্সে বাজছে ইসলামিক সংগীত। সংগীতের মাঝে মাঝে সাউন্ডবক্সে এলাকাবাসীকে জানানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি নেওয়ার আহ্বান। সাউন্ড বক্সের সেই আহ্বানে ছোট থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা কলস আর বোতল নিয়ে দলবেঁধে আসছেন পানি নিতে। এভাবেই প্রতি রমজানে বিকেল থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত ভ্যানে করে ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করে আসছে যশোরের কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। ২০১৯ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি রমজানে শহরের খড়কি এলাকায় সারা মাসব্যাপী বিনামূল্যে বিশুদ্ধ বরফ শীতল ঠান্ডা পানি সরবরাহ করে আসছে।

আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিকেলে প্রথম রমজানে খড়কী এলাকার আইডিয়া মোড়ে (পুরাতন জেবিন মোড়) খড়কি মসজিদের ইমামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিন্তু রোজাদারদের মধ্যে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি

বিলিয়ে দেওয়ার এই ব্যাপারটি যেন আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে গিয়েছে।

ছোট বাচ্চা থেকে বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিরাও আমাদের পানির ভ্যান দেখলে

বোতল, ঘড়া হাতে ছুটে আসে। পানি নিয়ে তারা তৃপ্তি হাসি দেয়

এবং পরের দিন ইফতারির আগে এই পানির অপেক্ষা করে। 

– দীপ্ত সিংহ, সমন্বয়ক, আইডিয়া বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি প্রকল্প 

আইডিয়ার কর্মীরা জানান, বরফ ফ্যাক্টরি থেকে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা বরফ কিনে আনা হয়। ফিল্টার করা ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে দেয়া হয় সেই বরফ। এরপর হিমশীতল ওই পানি একটি ট্যাংকে ভরে ভ্যানে চাপিয়ে বিতরণ করতে বেরিয়ে পড়েন একদল তরুণ-তরুণী। নিজেরাই ভ্যান চালিয়ে শহরের তিনটি পয়েন্টে রোজাদারদের মধ্যে ঠান্ডা পানি বিলিয়ে চলেন তারা। মাঝে মাঝে শরবতও বিতরণ করা হয়। খড়কি কবরস্থান থেকে পানি নিতে আসা রজব আলী নামে এক বৃদ্ধ জানান, প্রতি রমজানে এরা পানি দেয়। সারাদিন রোজা থাকার পরে ঠান্ডা পানির দরকার হয়। বাড়িতে ফ্রিজ না থাকায় এখানকার বরফ মিশ্রিত ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানি পান করে অনেক তৃষ্ণা মেটাই আমরা।

খড়কি পীরবাড়ি মসজিদ এলাকা থেকে হুইল চেয়ারে করে ১১ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে পানি নিতে আসেন ফাতেমা খাতুন। তিনি বলেন, সারাদিন রোজা থাকার পরে এখানকার ঠান্ডা পানি দিয়ে যখন ইফতার করি, তখন শরীরটা সজীব হয়। কলেজের ছেলে-মেয়েরা এভাবে ভ্যানে করে পানি নিয়ে মানুষের সেবা করছে। এটি অনেক ভালো একটি কাজ। জামাল হোসেন বলেন, এলাকায় পানির লেয়ার অনেক নিচে। আবার ফ্রিজও বাসায় নেই। ফলে এই গরমে সারাদিন রোজার পর বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি পাওয়া কঠিন। কিন্তু আইডিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের সেই চিন্তা দূর করছে। আমরা অপেক্ষা করি ইফতারের আগে এই পানির জন্য।

আইডিয়া বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি প্রকল্পের সমন্বয়ক আইডিয়ান স্বেচ্ছাসেবক দীপ্ত সিংহ। তিনি বলেন আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিন্তু রোজাদারদের মধ্যে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি বিলিয়ে দেওয়ার এই ব্যাপারটি যেন আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। ছোট বাচ্চা থেকে বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিরাও আমাদের পানির ভ্যান দেখলে বোতল, ঘড়া হাতে ছুটে আসে। পানি নিয়ে তারা তৃপ্তি হাসি দেয় এবং আবারও পরের দিন ইফতারির আগে এই পানির অপেক্ষা করে। এটাই আইডিয়ার প্রাপ্তি। প্রতিদিন ইফতারের পূর্বমুহূর্তে খড়কি পীরবাড়ি, জেবির মোড়, হাজামপাড়া এলাকা অব্দি নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করা হয়।

আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহিন জানান, বর্তমানে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে তীব্র পানি সংকট এবং নিম্নবিত্ত মানুষের পরিবারে রেফ্রিজারেটরের আয়োজন না থাকায় রমজানে এ প্রকল্প জনসাধারণের মাঝে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা ২০১৯ সাল থেকে একাধারে ইফতারের ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করে। এলাকায় এখন রমজান মাসে অপেক্ষায় রোজদাররা আমার স্বেচ্ছাসেবকদের এই পানির জন্য। তিনি বলেন, আমরা সবকিছুতেই চাই একটা মডেল হতে। এই উদ্যোগটা সকল ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ুক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.