Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য অনলাইনে ১৬২ কোটি টাকা বছরে বিক্রি

0

প্রতিবেদক :
সারাদেশে অনলাইনেই বিক্রি হচ্ছে যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের পণ্য। যার ফলে যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মাসেতু চালু ও অনলাইন প্লাটফরম তৈরির ফলে প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। সারাদেশে এ অঞ্চলের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একারণে গত একবছরে ১শ’ ৬২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। যশোরে উৎপাদিত পণ্যের মান যথেষ্ঠ ভালো ও দামও সাশ্রয়ী হওয়ায় ভারত ও চায়না থেকে আমদানিকৃত পণ্যের চাহিদাও কিছুটা কমছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে এ খাতের আরও উন্নয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

যশোরে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে কৃষিজ মেশিন, ফুড মেশিন, ফাউন্ড্রি, ছোট ছোট কারখানার মেশিন বিভিন্ন রকমের মটর পার্টস, সেফটি সিকিউরিটি পার্টস, রিপেয়ারিং সার্ভিস ইত্যাদি পণ্য উৎপাদনে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। কারখানাতে ঢালাই লোহা ও স্প্রিং লোহার সাহায্যে এসব মেশিন, মেশিনারিজ ও পার্টস তৈরি হচ্ছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এসব পণ্য বড় প্রতিষ্ঠান থেকে পাইকারি দরে ক্রয় করে খুচরায় বিক্রি করছে। তাদের এ কার্যক্রমের জন্যও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিক্রি ও চাহিদা।

যশোরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও চায়না থেকে আমদানিকৃত এসব মেশিনারিজ পণ্যের দাম বেশি। কিছু কিছু ক্রেতা বেশি দামের পণ্য নিতে চান না। তাদের প্রথমে যশোরে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে থাকেন। পরে যখন আবারও দরকার তারা লোকাল পণ্যই খোঁজ করেন। সে ক্ষেত্রে বলা যায় যশোরের পণ্যের মান যথেষ্ঠ ভালো এবং দামও সাশ্রয়ী।

যশোর অঞ্চলে প্রায় ৩শ’ প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত। এ শিল্প থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। যা বছরে দাঁড়ায় প্রায় ১শ’ ৬২ কোটি টাকার। তবে পদ্মা সেতু চালু ও ডিজিটাইজেশনের জন্য ৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে বলে দাবি তাদের। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তাদের পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগছে এখন সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। তাছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায় পণ্য পাঠাতেও এখন কম সময় লাগছে। কিছুদিন আগেও ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতো ট্রাকগুলো। কিন্তু এখন পদ্মা সেতুর ফলে দ্রুত এইসব পণ্য চাহিদামত ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। এ কারণেই তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মাসেতু চালু ও অনলাইন প্লাটফরম তৈরির ফলে প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের, ছবি : কপোতাক্ষ

অথৈ লিমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্বত্তাধিকারী আবিদ হাসান বলেন, এর আগে তিনি প্রতিমাসে এক থেকে দেড়লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতেন। পদ্মা সেতু ও অনলাইন মার্কেটে তার প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত দু’দিন আগেও ফরিদপুর, পাবনা, মুন্সীগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ বেশকিছু জেলা থেকে তার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন। তিনি এ ধরনের অর্ডার এর আগে পেতেন না বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ইনঞ্জিনিয়ারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যশোরের সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম স্বপন বলেন, একসময় দালালের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে হতো। এখন অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রিতে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। তাছাড়া পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকেই তাদের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। কারণ এখন অনেক জেলা থেকেই তারা অর্ডার পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নয়নে ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু করে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সুইচকন্টাক্টের প্রবৃদ্ধি প্রকল্প। ওই সংস্থার আর একটি প্রকল্প ২০২১ সাল থেকে বাংলা ট্রেডার্স নামে একটা অনলাইন প্লাটফরম কাজ করছে। শিল্পের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম আরও প্রসারিত করতেই কাজ করছে এ অনলাইন মার্কেটটি। এর ফলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অর্ডার করলেই যশোর থেকে কুরিয়ারে এসব ভারি ভারি পণ্য পাঠানো হচ্ছে। বেশি চাহিদা রয়েছে ধান ঝাড়া মেশিন, বিছালী কাটা মেশিন, ইটের খোয়া ভাঙ্গা মেশিনসহ বিভিন্ন গাড়ির যন্ত্রাংশ পণ্যের।

উন্নয়নের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছানো ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে সুইচকন্টাক্ট প্রকল্পের বাংলা ট্রেডার্সের অন্যতম উদ্দেশ্য। সারাদেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ও এর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলা ট্রেডার্সর সাথে সংযুক্ত করে সকলকে ই-ডাইরেক্টরি ও ই-কমার্সের অধীনে আনতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের প্রসার, সারাদেশে এ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুসারে সরবরাহ বৃদ্ধিতে উন্নয়নমূলক আধুনিক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাইজেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এখনও পর্যন্ত যশোর অঞ্চলের ৩শ’ কারখানা এ অনলাইন প্লাটফরমের সাথে যুক্ত হয়েছে।

সুইচকন্টাক্টের ফান্ডে তৈরি বাংলা ট্রেডার্সের প্রধান কর্মকর্তা ইমানুর রহমান ইমন বলেন, দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প পণ্য সমগ্র দেশে ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হলো বাংলা ট্রেডার্সের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে সরকারের বাস্তবায়িত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে এই লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প অন্যতম।

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.