প্রতিবেদক :
অসহায় পরিবারের সুখের সন্ধানে নাজমুল গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। স্বাচ্ছন্দ্যও ফিরতে শুরু করে পরিবারে। কিন্তু বছর না পেরুতেই সব শেষ। মক্কায় ওমরাহ পালন করতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ হলো সে স্বপযাত্রা। গত সোমবার সৌদি আরবের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন যশোর সদর উপজেলার ঘুণী গ্রামের নজরুল ইসলাম নাজমুল (২৮)। এ রেমিট্যান্স যোদ্ধার আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
৭ ভাইবোনের মধ্যে নাজমুল পঞ্চম। একবছর আগে সৌদি আরবে গিয়ে আভা কামিম শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত ২৭ মার্চ সোমবার দিবাগত রাতে একটি বাসে ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কা যাওয়ার পথে আবহা এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বাসটি। বাসটিতে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে মারা যান ২২ যাত্রী। নাজমুলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩ জন বাংলাদেশি মারা যান।
![](https://kapotakkho.com/wp-content/uploads/2023/03/dainikkapotakkho_29.3.23_nazmul_home_1-scaled.jpg)
আজ বুধবার (২৯ মার্চ) সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ঘুনি গ্রামে নাজমুলের বাড়িতে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। পরিবারের একছেলের এই করুণ মৃত্যুর ঘটনায় মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রীর আহাজারিতে পুরো এলাকায় শোকের মাতম বইছে। কোনো সান্তনাই তাদের কান্না থামাতে পারছে না। বাড়ির উঠানে লিচুগাছ তলায় চেয়ারে বসে আছে মা খাদিজা বেগম। সন্তান হারানোর শোকে বারবার আহাজারি করতে দেখা গেছে তাকে। তাকে ঘিরে প্রতিবেশিরা দিচ্ছেন সান্তনা।
![](https://kapotakkho.com/wp-content/uploads/2023/03/dainikkapotakkho_29.3.23_nazmul_home_2-scaled.jpg)
আহাজারি করতে করতে নাজমুলের মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমার সোনা বাবাটা কত ভালো ছিলো। কাজকর্মের মধ্যে নামাজ পড়তো। সোমবার আমারে ফোন করে বলে মা, আমি ১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। ওমরা করতে যাবো। তুমি দোয়া কর আমার জন্য।’ কিন্তু ছেলেটা আর ওমরা করতে পারলো না। তার আগেই বাস দুর্ঘটনায় ছেলেটা মারা গেছে। তিনি জানান, আমি যখন সোমবার তারাবির নামাজ পড়ি: তখনই হঠাৎ করে ফোন আসলো। নামাজের মধ্যেই ভাবলাম, ঐ মনে হয় আমার নাজমুল ফোন দিয়েছে। তবে নাজমুল না! তার এক সহকর্মী ফোন দিয়েছে। ফোনটা আমার বড়ছেলে ধরেছে। ধরেই অপর প্রান্ত থেকে কথা আসলো নাজমুলের বাসে আগুন লেগেছে। নাজমুল মারা গেছে। আকাশ পানে তাকিয়ে তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ও আল্লাহ রে….‘আগুনে পুড়ে’ ছেলেটা কত না কষ্ট পেয়েছে। মৃত্যুর আগে আমাকে কতবারই না ডেকেছে। ও আল্লাহ আমার নাজমুলরে তুমি ফিরায়ে দাও। আমার নাজমুলরে চোখের দেখা দেখতে চাই।
নাজমুলের বাবা কওসার মোল্লা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আমার অন্য সন্তানদের চেয়ে নাজমুল শান্ত প্রকৃতির। বিদেশ যাওয়ার কয়েকমাস আগে বিয়ে করেছিল। বউ রেখে সংসারের হাল ধরবে, নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই বিদেশ গেছিলো। আমার সেই ছেলেটা এভাবে চলে যাবে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।
![](https://kapotakkho.com/wp-content/uploads/2023/03/dainikkapotakkho_29.3.23_nazmul_home_3-scaled.jpg)
নাজমুলের বড়ভাই কামরুল ইসলাম বলেন, মক্কা যাওয়ার বাসে উঠার আগেই আমার সঙ্গে কথা হয়। ওটাই আমাদের সঙ্গে শেষ কথা। ফোনে দোয়া চাইছিলো। প্রায় নতুন বউ রেখে বিদেশ গেছিলো। ওর কোনো সন্তান হয়নি। ফলে আমাদের সন্তানদের নিয়েই ওর ভাবনা চিন্তা। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সব আবদার নাজমুলই পূরণ করতো। নাজমুলের চাচা আবুল কালাম বলেন, আমাদের ভাইপোর মৃত্যুতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। নাজমুলের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তার মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালে রয়েছে। বুধবার ডিএনএ টেস্ট হয়েছে। আমরাও সরকারিভাবে যোগাযোগ করছি দ্রুত নাজমুলের মরদেহ দেশে আনতে।