Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরের তরুণীকে রাস্তায় রেখে পালাল যুবক

১৫ দিনের পরিচয়ে ঢাকায় নিয়ে হোটেলবাস

0

প্রতিবেদক :
ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এক তরুণীকে যশোর থেকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বিয়ের ভুয়া কাগজ তৈরি, ধর্ষণ ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নেত্রকোনোর কেন্দুয়া উপজেলার দুর্গম চর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, নিজেকে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে তরুণীদের বিশ্বাস অর্জন করে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন এই যুবক। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির ওয়ারি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রেফাতুল ইসলাম। ওই যুবকের নাম মো. আলমগীর খাঁ ওরফে আরিফ (৩০)। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় তার বাড়ি।

অনলাইনে প্রেম প্রতারণার কথা উল্লেখ করে এসি মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, যশোরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীর ফেসবুকে আলমগীর খাঁ ওরফে আরিফের সঙ্গে পরিচয় হয়। মাত্র ১৫ দিনের পরিচয় থেকে আরিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাবিনার। অনলাইনে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্ককে বিশ্বস্ততায় রূপ দিতে আরিফ নিজেই চলে যান যশোরে সাবিনাদের বাড়িতে। সরাসরি দেখা করে আস্থা অর্জন শেষে আরিফের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন এই তরুণী।

প্রতারক আরিফ সাবিনাকে যশোর থেকে সরাসরি রাজধানীর পুরান ঢাকার

জজ কোর্ট এলাকায় নিয়ে আসেন। তিন পাতার স্ট্যাম্পে সাবিনাকে

স্বাক্ষর করতে বলেন। দ্বিধান্বিত সাবিনাকে আশ্বস্ত করেন যে

এটিই তাদের বিয়ের দলিল। অথচ তা ছিল একটি বানোয়াট নোটারি।

মো. রেফাতুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি, ওয়ারি জোন  

রেফাতুল ইসলাম আরও বলেন, প্রতারক আরিফ সাবিনাকে যশোর থেকে সরাসরি রাজধানীর পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় নিয়ে আসেন। তিন পাতার স্ট্যাম্পে সাবিনাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। দ্বিধান্বিত সাবিনাকে আশ্বস্ত করেন যে এটিই তাদের বিয়ের দলিল। অথচ তা ছিল একটি বানোয়াট নোটারি। এরপর ওই তরুণীকে নিয়ে ওঠেন পাশের একটি আবাসিক হোটেলে। সেখানে সাবিনাকে ধর্ষণ শেষে কৌশলে সাবিনার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণের চেন ও মোবাইল ফোন নিয়ে সটকে পরেন আরিফ। প্রেমিকের মুখোশের আড়ালে থাকা আরিফ সাবিনাকে পুরান ঢাকার রাস্তায় ফেলে নিজ এলাকায় গিয়ে আত্মগোপন করেন।

এসি মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, বিশ্বাস করে মাত্র ১৫ দিনের পরিচিত প্রেমিকের সঙ্গে বাড়িছাড়া সাবিনা সর্বস্ব হারিয়ে ওয়ারি থানায় হাজির হন। প্রেমিকের প্রতারণার শিকার তরুণীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠে নামে পুলিশ। তিনদিনের অভিযান শেষে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। পুলিশের অভিযানের আগেই নিজেকে আড়াল করতে স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেপ্তার করতে বেগ পেতে হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আরিফের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। দীর্ঘদিন ধরে বেকার আরিফ মোবাইলে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করতেন। তার মোবাইলে বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি ও বিভিন্ন মেয়েদের ব্যক্তিগত ছবি পাওয়া গেছে। যদিও নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন, তবে তিনি এমন কোনো পদে কখনও চাকরি করেননি। বরং একসময় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করার সময়ে সেনাবাহিনীর পোশাক পাওয়ার দাবি করলেও সেটিও সঠিক নয়। এই পোশাক পরিহিত ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি।

বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত পরিচয় দেওয়া আরিফ ২০১৩ সালে আরও এক তরুণীকে একইভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার বন্ধুর বাসায় নিয়ে বন্ধুসহ ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা পেশার পরিচয়ে তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে একইভাবে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ভুক্তভোগীরা লোকলজ্জার ভয়ে আইনের আশ্রয় না নেওয়ায় নিরাপদেই প্রেমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন এই প্রতারক আরিফ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.