Take a fresh look at your lifestyle.

যবিপ্রবি হলের কথিত টর্চার সেলে ৪ ঘন্টা আটকে নির্যাতন!

অভিযুক্ত দুজন সাময়িক বহিষ্কার, মামলা দায়ের হবে, তদন্ত কমিটি গঠন, নিরাপত্তার নির্দেশ

0

প্রতিবেদক :
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আবাসিক হলের কথিত টর্চার সেলে এক ছাত্রকে ৪ ঘন্টা আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদার দাবিতে ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারীদের নির্যাতনের শিকার ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় রোববার মধ্যরাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহ জেলার বলারামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। অভিযুক্তরা হলেন যবিপ্রবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের সদ্য বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থী শোয়েব আলী। অভিযুক্তরা হলের ৫২৮ রুমের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসাবেই পরিচিত।

ঘটনার পর আজ সোমবার (৩ এপ্রিল) অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসাথে তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা দায়ের ও ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযুক্ত দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্টকে থানায় মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে প্রভোস্ট বডি আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। এছাড়াও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রোববার দুপুরে ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলাকালীন সময়ে শোয়েব ও সালমান তাকে ডেকে হলে নিয়ে যান। এরপর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রেখে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে অবস্থা অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ইসমাইলকে বেঁধে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়, ছবি : কপোতাক্ষ

বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি জানান, ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। রোববার দুপুরের পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তার ফোনও বন্ধ ছিল। সে রোজা ছিল। ইফতারের সময় ইসমাইলকে না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। ওর ক্লাসমেটরা জানায়, হলের সালমান আর শোয়েব ক্লাস চলাকালীন সময়ে ডেকে নিয়ে গেছে। তারপর আর খোঁজ নেই ইসমাইলের। পরে আমরা সবাই হলে গিয়ে দেখি ৫২৮ নম্বর কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যাম্পাসে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়াতে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করি।

এদিকে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র বলছে, ৫২৮ নম্বর কক্ষটি ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী শোয়েব আর সালমান দুজনই থাকতেন। কক্ষটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি গাঁজা সেবন ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার দায়ে শোয়েব বহিষ্কার হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলের নিয়মিত বাসিন্দা তিনি। এমনকি এর আগেও এই দুজনের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের শিবির উপাধি দিয়ে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী। এই বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, ব্যক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না। চাঁদাবাজদের ছাত্রলীগ কখনও প্রশ্রয় দেয় না। আর ওরা ছাত্রলীগের পদধারী কেউ না।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, ছবি : কপোতাক্ষ

তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শোয়েব আলী দাবি করেন, ইসমাইল তাদের বন্ধু। তাকে তারা মারপিট করেননি। একটি ঘটনা জানার জন্য ইসমাইল তাদের সাথে তাদের রুমে আসে। কিন্তু ওই ঘটনায় জড়িত বড়ভাইয়েরা এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ওই তিন বড়ভাই তাদের রুমে এসে ইসমাইলকে মারপিট করেছে। অথচ ঘটনাটি ঘুরিয়ে দিয়ে তাদেরকেই শোয়েব ও সালমান) দোষী করা হয়েছে।

শোয়েব আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো বক্তব্য বা জবাবদিহিতা না নিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা অবিচারের শিকার হয়েছি।

শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ভর্তি করার আগে তার মুখ দিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা নির্যাতনের কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী সালমান এম রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আর এর আগেই বিশৃঙ্খলা ও গাঁজা সেবনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল শোয়েব আলীকে। বহিষ্কার হওয়ার পরেও কিভাবে হলে ছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শোয়েব মাঝে মধ্যে থাকতো। তারা ছাত্রলীগ করে কিনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.