যশোর এমএম কলেজ হলে ছাত্রলীগের ভাংচুর, দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
প্রতিবেদক :
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এমএম কলেজ) আসাদ হলে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুর একটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রাবাসের ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে সভাপতি-সম্পাদকের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাংচুর করা হয়েছে। এদিকে, ছাত্রাবাসে হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে এদিন বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় একটি পত্রিকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস। তবে এই মানববন্ধনে আসাদ হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত না হওয়ায় তিনি ছাত্রাবাসে ছাত্রদের ডাকতে যান। ছাত্রাবাসে কাউকে না পেয়ে তিনি ছাত্রাবাসের ২০১, ২০২, ২০৩, ও ২০৫ নম্বর কক্ষ ভাংচুর করেন। এই ভাংচুরে সভাপতি ছাড়াও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি। তবে এই ভাংচুরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সরাসরি অংশ না নিলেও হলের প্রধান ফটকের বাইরে উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রাবাসের বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন রনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কয়েকজন অছাত্র মিলে ছাত্রাবাসে অতর্কিতভাবে ভাংচুর চালায়। হঠাৎ করেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনায় সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। হলের ভুক্তভোগীরা কেউ প্রতিবাদ করছে না। ছাত্রলীগের সভাপতির এমন কর্মকান্ডে আমরা সবাই হতবাক।’
![](https://kapotakkho.com/wp-content/uploads/2023/04/dainikkapotakkho_05.4.23_asad_hall_hamla_2-scaled.jpg)
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটির নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। অন্যটি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ দুই নেতার বিভক্তির কারণে সংগঠনের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপে বিভক্ত। এই বিভক্তের কারণে এমএম কলেজ ছাত্রলীগেও দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিল। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শহীদ আসাদ হল দখলে নেন শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা। শাহীন চাকলাদারের অনুসারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে সম্প্রতি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরা দখলে নিয়েছেন। নাবিলের অনুসারী ও কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নুর ইসলাম হলটি দখলে রেখেছেন। হল দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই দুই গ্রæপের মহড়া-মিছিলে উত্তেজনা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসে। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল কলেজে বহিরাগত তরুণদের নিয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগ ওঠায় শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নূর ইসলামকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা ছাত্রলীগ। তবে অব্যাহতি দিলেও নুর ইসলাম এখনও আসাদ হল নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাবে। এমনকি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কর্মসূচিতে আসাদ হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ না নিতে নুর ইসলামের নির্দেশও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে আসাদ হলের নেতাকর্মীরা সভাপতির কর্মসূচিতে উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ছাত্রাবাসে ঢুকে ভাংচুর করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস। তিনি বলেন, ‘নুর ইসলাম বখাটে। ওর তো ছাত্রত্ব নেই। ও নিজে ছাত্রাবাস ভাংচুর করে এর দায়ভার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে দিচ্ছে। তাছাড়া কলেজে ক্যাম্পাসে তো সিসি ক্যামেরা রয়েছে; ওগুলো যাচাই-বাছাই করলেই দেখা যাবে কে ছাত্রাবাস ভাংচুর করেছে।
এদিকে ছাত্রবাসে ভাংচুরের ঘটনার পরে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘কলেজ প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। এমনকি কলেজ প্রশাসনও আমাদের অবগত করেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।