Take a fresh look at your lifestyle.

সন্তানের মঙ্গল কামনায় ইফতার সেহরি

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
একমাত্র মৃত সন্তানের আত্মার মঙ্গল কামনায় মেহেরপুরের ফার্মেসি ব্যবসায়ী নুর নাহার বেগম প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেহেরপুর পিডিবি মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতার, রাতে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের রোজাদার রোগী ও রোগীর স্বজনদের জন্য সেহরির ব্যবস্থা করেন। ৮ বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে এই কাজটি করে চলেছেন তিনি। একমাত্র মৃত ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় তার এই কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

রাত ২টা বাজার পর থেকেই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দূর গ্রামের রোগী ও তাদের স্বজন থালাবাটি নিয়ে হাসপাতাল গেটের বাইরে চলে আসে। হাসপাতাল পার্শ্ববর্তী দুস্থ পরিবারেরও অনেকে আসে। সেখানে নুর নাহার বিনামূল্যে সেহরি বিতরণ করেন। কেউ সেখানে বসে নুর নাহারের দেয়া সেহরি খায়, কেউবা থালাবাটি ভরে সেহরি নিয়ে যায়।

হাসপাতালের কাছেই নুর নাহার বেগমের বাড়ি। তিনি পুরো রমজান মাসজুড়ে হাসপাতালের রোগী, রোগীর স্বজন এবং নিকটবর্তী দুস্থদের মাঝে সেহরি বিতরণ করেন। হাসপাতাল গেটের সামনে নিজের ‘নাহার ফার্মেসি’র সামনে নারী-পুরুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সেহরি গ্রহণ করতে দেখা যায়। নুর নাহার বাড়ির পাশের পিডিবি মসজিদের মুসল্লিদের মাঝেও প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করেন। এই হিসাবে ইফতার ও সেহরি মিলে প্রতিদিন তিনি দু’শতাধিক রোজাদারকে নিজ খরচে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।

নুর নাহার বেগম বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই তার একমাত্র সন্তান এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেই সন্তানের আত্মার শান্তি কামনায় ২০১৪ সাল থেকে রোজাদারদের সেবা করি। নিজের সামর্র্থ্য আছে তাই গরিব মানুষকে সেহরি খাওয়াই। মসজিদের মুসল্লিদের ইফতার দিই।

নুর নাহারের স্বামী নুরুল ইসলাম মেহেরপুর পিডিবি অফিসে কর্মরত। হাসপাতাল গেটে তাদের ‘নাহার ফার্মেসি’ নামে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। আছে বিঘা দশেক জমি। নুর নাহার ফার্মেসি ব্যবসা করেন। প্রতিদিন নিজ হাতে মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতার আয়োজন এবং রাত ১০টার পর দুস্থদের জন্য সেহরি রান্না করেন। ডিম, মাংস অথবা মাছের সঙ্গে চিকন চালের ভাত, ডাল একটি সবজি দিয়ে সেহরি সারেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নার্গিস আরা, মনোহরপুর গ্রামের বিলকিস, গাংনী উপজেলার সামসুল ইসলাম, রফিকুল আলম, মুজিবনগর উপজেলার মিনুয়ারাসহ অনেকেই জানান, কয়েকদিন ধরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নুর নাহার বেগম তাদের সেহরি দেয়ার কারণে সেহরির জন্য চিন্তা করতে হয় না। রোগীদের মাঝে সেহরি বিতরণে নুর নাহারকে সহযোগিতা করেন হাসপাতাল এলাকার সাইফুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম নামে দুজন। হাসপাতালের সেবক সেবিকারাও সহায়তার হাত বাড়ান সেহরি বিতরণে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার জামিল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুরের রোগিরা সেহরি নিয়ে চিন্তা করেনা। রোগিদের আগেই নুর নাহার জানিয়ে দিয়ে যান তাদের সেহরি প্রদান করা হবে। ফলে রোগিরা সেহরির সময় হাসপাতাল গেটে গিয়ে নাহার ফার্মেসির সামনে থেকে থালা ভরে সেহরির খাবার নিয়ে আসে। নুরনাহারের বেদনার কথা শুনে তারা প্রাণখুলে দোয়া করে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.