Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে কিশোরী গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্তা দম্পতি কারাগারে

মেয়েটি হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, চিকিৎসার খরচ যোগানো নিয়ে পরিবারে শঙ্কা

0

প্রতিবেদক :
যশোরে গৃহকর্মী কিশোরী নির্যাতনের ঘটনায় কেতোয়ালি থানায় শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে দুজনকে আসামি করে মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন : গৃহকর্তা সরকার শামীম আহমেদ ওরফে অংকু (৩২) ও তার স্ত্রী জিন্নাত রেহেনা জুই (২৭)। দুজনই বর্তমানে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন।

এদিকে মেয়েটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মেয়েটির মা ও পরিবারের স্বজনেরা হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছেন না মেয়েটির মা।

মেয়েটির মা আজ শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বলেন, ‘আমার মেয়ের একটি পা ও একটি চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সে যন্ত্রনায় ছটফট করছে। নির্যাতনে পা ভেঙ্গেছে কিনা দেখার জন্যে হাসপাতালের ডাক্তার এক্স রে ও আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে যাওয়ায় রক্তসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেছে। এছাড়া আমাদেন থাকা খাওয়ার খরচের টাকাও কাছে নেই। এখন মেয়েটির চিকিৎসা করাবে কি করে, সেই চিন্তায় আছেন তিনি।

নির্যাতনকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, নিজেদের সন্তানের মতো লালন-পালন করার জন্যে আমার মেয়েটিকে তারা নিয়েছিল। প্রথমে তারা রংপুরে ছিল। হঠাৎ তারা আমাকে কিছু না জানিয়ে নয় মাস আগে রংপুর ছেড়ে চলে যায়। আমি ফোন করলে তারা ফোন ধরে না। দুই একবার ফোন ধরলেও মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিতো। তাদের ঠিকানা চেয়েও পাইনি। তারা নির্যাতন করে আমার মেয়েটার সর্বনাশ করেছে। তিনি ওই দুইজনের ফাসি চাই।

গত বুধবার রাত একটার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর- ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কের ব্যাংকপাড়ার একটি ভবন থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে মুর্মুষ অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

মেয়েটির বয়স বারো অথবা তেরো। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাঁ চোখে রক্ত জমানো। ঠোঁটের নিচে ক্ষত চিহ্ন। দুই পায়ের নখগুলো থেতলানো। পিঠে কালচে রক্ত জমানো ক্ষত। রুটি তৈরির ব্যালন, খুন্তি, ডিসলাইনের মোটা তার ও সেলাই রেঞ্জ দিয়ে এমন অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে মেয়েটির উপরে। মেয়েটিকে উদ্ধারের পাশাপাশি নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্তা সরকার শামীম আহমেদ (৩২) ও তার স্ত্রী জিন্নাত রেহেনা জুইকে (২৮) আটক করে পুলিশ। সরকার শামীম আহমেদ একটি কিটনাশক কোম্পানির সেলস ইউনিট ম্যানেজার পদে যশোরে কর্মরত। যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া সড়কে ভাড়ার একটি বাড়িতে তারা থাকেন। মেয়েটি তাদের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো।

যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল আলম চৌধুরীকে আজ শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘মেয়েটির উপরে নির্যাতন চালানোর অভিযোগে শিশু নির্যাতন আইনের ৭০ ধারায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের স্বজনেরা আসতে দেরি করায় মামলা দায়েরের আগেই বৃহস্পতিবার বিকালে ৫৪ ধারায় আটক দুইজনকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

তারা ৮ মাস ধরে নির্যাতন করে আসছেন বলে অভিযোগ করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটি জানায়, আমাকে সময় বেঁধে গৃহস্থালির সব কাজ করতে হতো। কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা, থালা বাসন পরিষ্কার, মসলা বাটাসহ সব কাজ করতো হতো। কোনো কাজে একটু বেশি সময় লাগলে রুটি বানানো ব্যালন, ডিসের মোটা তার ও সেলাই রেঞ্জ নিয়ে মারতো গৃহকর্তি জান্নাত জুঁই ও তার স্বামী। বুধবার সন্ধ্যায় ছাদ থেকে কাপড় তুলে আনতে একটু দেরি হওয়ায় ব্যালন দিয়ে বেদম পিটুনি দেওয়া হয়। চোখে রক্ত জমে যায়। সেলাই রেঞ্জ দিয়ে পায়ের নক থেতলে দেয়। চিৎকার করলে মেরে ফেলার ভয় দেয়। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারি না। রাতে দরজা খোলার সময় পাশে বাড়ির একজন আমাকে দেখে ঘটনা জানতে চাইলে আমি বলে দিই আমাকে মেরেছে। পরে রাতে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

কয়েক বছর আগে মেয়েটির বাবা মারা গেলে তার মা আবার বিয়ে করেন। তখন থেকে মেয়েটি পার্শ্ববর্তী গ্রামে তার নানী বাড়িতে থাকতো। পরে তার মায়ের পরিচিত সরকার শামীম আহমেদ মেয়েটিকে লালন পালন করার কথা বলে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। মেয়েটি জানায়, এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তো সে। লেখাপড়া করানোর কথা থাকলেও তাকে স্কুলে ভর্তিই করেনি। তিন বেলা ঠিকমতো খেতেও দিতো না। গৃহকর্তা দম্পতির যমজ দুই সন্তানকেও মেয়েটিকে দেখভাল করতে হতো।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ বলেন, মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে ভোতা অস্ত্র দিয়ে পেটানোর কারণে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমে রয়েছে। ওই স্থানে সার্জারি করা লাগতে পারে। এছাড়া পা দুটো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এক্স-রে, রক্তসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কিশোরী মেয়েটির শরীরের জখম দেখলে কান্না চলে আসে। দীর্ঘদিন তার শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। মেয়েটার পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ চিকিৎসার যাবতীয় খরচ হাসপাতাল থেকে বহন করা হবে। তার স্বজনদের কোনো টাকা খরচ করা লাগবে না বলেও তিনি জানান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.