Take a fresh look at your lifestyle.

সুকুমার দাস ছিলেন যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বটবৃক্ষ

যশোরে নাগরিক শোকসভায় স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করার দাবি

0

প্রতিবেদক :
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর জেলার প্রয়াত সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাসের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সবার মাথার ওপর ছায়ার মতো ছিলেন। তিনি ছিলেন বটবৃক্ষ। তার ছায়াতলে অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছিলেন। একইসঙ্গে সত্য ও সুন্দরের প্রতীক ছিলেন তিনি। সাহসী এই মানুষ সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে লড়াই করেছেন অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার। সাংস্কৃতিক চর্চায় অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন যশোরসহ বিভিন্ন জেলায়।

আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে সুকুমার দাসের স্মরণে নাগরিক শোকসভায় বক্তারা একথা বলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর জেলা শাখার তত্ত্বাবধানে নাগরিক শোকসভা কমিটি এই নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে। শোকসভায় যশোরে সাংস্কৃতিক চর্চা বটবৃক্ষের মতো ভূমিকা রাখাতে সুকুমার দাসকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করার দাবি তোলেন বক্তারা।

শোকসভায় যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম বলেন, সামাজিক অঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন সুকুমার দাস। তিনি সবসময় যশোরের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি তার সকল দায়দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অপরিহার্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন তার কাজকর্মের মাধ্যমে। যশোরের জেলা প্রশাসন এই সাংস্কৃতিক যোদ্ধাকে আজীবন মনে রাখবে তার বন্ধুসুলভ ও সাংস্কৃতিকবান্ধব নেতা হয়ে সবসময় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠার মধ্যে দিয়ে।

পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, শুদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে সুকুমার দাস অমূল্য অবদান রেখে গেছেন যশোরে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক নিবেদিতপ্রাণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ছিলেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাসের অকাল প্রয়ানে শুধু যশোরে নয়; গোটা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার জীবনবোধ উপলদ্ধি এবং ধারণ করলেই তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নিশ্চিত হবে।

শোকসভায় বক্তরা আরও বলেন, দক্ষিণবঙ্গের বাংলাদেশের গণসংগীতের প্রাণপুরুষ সুকুমার দাস, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত এক তারকা সংগঠক ছিলেন। বিস্ময়কর প্রাণশক্তিতে বলিয়ান এই মানুষটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিবাচক সংঘটিত ঘটনাসহ এর প্রতিবাদে নানা ঘটনায় আন্দোলন করে গেছেন। সমাজের কিছু মানুষ থাকে যাদের কোনো বিকল্প হয় না। সুকুমার দাস তেমনি একজন মানুষ। নিরঅহংকার নির্লোভী মানুষটা সৎ সাহস নিয়ে মরার আগমূর্হত পর্যন্ত অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি কখনও। তাই জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আর সাংস্কৃতিক এই যোদ্ধাকে সম্মানিত করতে রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা বা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভ‚ষিত করার দাবি তোলেন বক্তারা।

নাগরিক শোকসভা কমিটির আহ্বায়ক হাবিবা শেফার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার, বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযুদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, উদীচী যশোরের সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল, প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, ডা. ইয়াকুব আলী, ডা. নাসিম রেজা, পথনাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্রাবণী সুর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাসুদেব বিশ্বাস, প্রয়াত সুকুমার দাসের স্ত্রী শুক্লা দাস প্রমুখ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলুর সঞ্চালনায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত সুকুমার দাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সমবেত প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন পুনশ্চ যশোরের শিল্পীরা, ছবি : কপোতাক্ষ

এর আগে, সুকুমার দাসের স্মরণে তার স্বরচিত গান এবং সমবেত প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন তার প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ যশোর, উদীচী, সুরবিতান, সুরধুনী ও চাঁদের শিল্পীরা।

নাগরিক শোকসভা উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে সুকুমার দাসকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল রাতে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে সুকুমার দাস মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি ছিলেন যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য, পুনশ্চ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা এবং যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সহসভাপতি। এর আগে তিনি দেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী যশোরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পুনশ্চ যশোর। সুকুমার দাসকে যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিশেষ করে গানের শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ হিসেবে সম্মান জানাতেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিলেন গানের শিক্ষক। বিশেষ করে গণসংগীতে তিনি ছিলেন এক ও অনন্য। তার কণ্ঠে ভ‚পেন হাজারিকার গানও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতেন শ্রোতারা। একাধারে তিনি ছিলেন তুখোড় সংগঠকও।

Leave A Reply

Your email address will not be published.