Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরের হরিহর নদের টুটি চেপে ধরেছে ১৫৪ দখলদার

0

প্রতিবেদক :
অবৈধ দখলদাররা যশোরের হরিহর নদের টুটি চেপে ধরেছে। দখল করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে নদ! শুধু তাই না, নদের জমির মালিকানাও করে নিয়েছেন নিজেদের নামে। এমনকি নদের জমি বেচাকেনা ও ইজারা দেয়াও চলছে। যে যেভাবে পারছেন নদের নিজেদের আওতার এলাকায় পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছেন। কেউ বালু তুলে বিক্রি করছেন। পিছিয়ে নেই এনজিও-ও, লিজ নিয়ে পার্ক বানানোরও অপচেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষের গতানুগতিক বুলি : নদের জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডের সুযোগ নেই। নদটি খননের জন্য প্রকল্পের চেষ্ট চলছে। অনুমোদন হলে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খনন করা হবে।

সূত্র জানায়, হরিহর নদটি কপোতাক্ষ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে খুলনার আপারভদ্রা, সর্বশেষ তেলিগাতিতে মিশেছে। ৪৬ কিলোমিটার এই নদের বেশিরভাগ এখন দখল হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্থান ভরাট করে ফেলেছেন স্থানীয়রা। ১৫৪ জন দখলদার নদের জমি বিভিন্ন সময়ে নিজ নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। যেসব স্থান দখল হয়নি, বর্ষা মৌসুমে সেসব স্থানে অল্প পানি থাকে। শীতকালে পানি শুকিয়ে হাঁটুসমান হয়।

মণিরামপুরের কুলিন্দা গ্রামের নদপাড়ের বাসিন্দা কৃষক মোশাররফ হোসেন জানান, নদটি ঝিকরগাছা, মণিরামপুর ও কেশবপুরবাসীর সম্পদ। এই নদের পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। কৃষকরা পাট জাগ দিত। কিন্তু এখন এটি দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। তারা বলে, এই জমি তাদের নামে রেকর্ড। নদীর জমি কিভাবে মানুষের নামে রেকর্ড হয় সেই প্রশ্ন করেন কৃষক মোশাররফ। ৩০ বছর আগে নদে স্নান করা, সাঁতার কাটার স্মৃতিচারণ করে গোয়ালদহ গ্রামের পীযুষ বিশ্বাস বলেন, এখন নদের ভেতরে বিভিন্ন লোক বাঁধ দিয়ে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। তারা এখানে মাছ চাষ করে, কেউ বালু তুলে বিক্রি করে দেয়। এটা যে একসময়ের প্রবল প্রবাহের নদ ছিল, তা এখন দেখে বোঝার উপায় নেই। এড়েন্দা গ্রামের বৃদ্ধা সৈয়দা খাতুন জানান, ছোটবেলা থেকে নদে গোসল করেছেন। আগে নদী ছিল। এখন বোঝা যায় না। লোকজন দখল করে নিয়েছে। মানুষকে নামতেও দেয় না। আলিমুন নেছা (৬৮) বলেন, ‘নদীর মদ্যি মেশিন লাগায়ে লোকজন বালি তুলতেছে। ভয় করে কখন আমার বাড়িডা ধইসে পড়ে। স্বামী-সন্তান নেই, ভয়তে কাউরে কতিও পারিনে কিছু।’ মোহাম্মদ নজির (৬৫) বলেন, দেশ স্বাধীনের পর এই গাঙে কতো গোসল করিছি, সাঁতার কাটিছি, মাছ ধরিছি। কিন্তু এখন দেইখে বোঝার উপায় নেই, এইডে গাঙ।

ইচ্ছা ফাউন্ডেশন ‘ইএফ ফ্যামিলি পার্ক’ প্রকল্প হাতে নিয়ে সরকারি ঋণ পাওয়ার অপচেষ্টা করছে, ছবি : কপোতাক্ষ

মণিরামপুরের গোয়ালদহ বাজারের পাশে নদের একটি অংশে ‘ইচ্ছা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি এনজিও ‘ইএফ ফ্যামিলি পার্ক’র প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ১৩ বিঘা জমি ঘিরে মাছ, হাঁস ও সবজি চাষের প্রকল্প দেখিয়ে তারা সরকারি ঋণ পাওয়ারও চেষ্টা করছে। এজন্য নদের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘হরিহর নদী’ সাইনবোর্ডটিও মুছে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী তবিবর রহমান বলেন, শুনেছি, নদের একটি অংশজুড়ে পার্ক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নদনদী সরকারি সম্পত্তি। কখনও শুনিনি এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয় কারও। হরিহরকে এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নদটি দ্রুত উদ্ধার করুক। সাধারণ মানুষ যেন এখানে গোসল করতে পারে, সাঁতার কাটতে পারে, জমিতে সেচ দিতে পারে, মাছ ধরতে পারে। এ ব্যাপারে ইচ্ছা ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল এডভাইজার অপু হাসান সাংবাদিকদের বলেন, জমি মালিকের কাছ থেকে তারা ডিড করে ১৩ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা থাকায় প্রকল্পটি সেভাবেই পড়ে আছে।

নদের জমি ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা আল রোহান বলেন, এই নদ ছোটবেলা থেকে দেখছি। সম্প্রতি জানতে পেরেছি, নদকে কৃষিজমি দেখিয়ে অনেকে নিজের নামে রেকর্ড করে দখল করেছেন। আমার দাদার নামেও কিছু জমি রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু আমরা নদের জমি দখল করতে চাই না। আমরা চাই আমাদেরসহ যাদের ব্যক্তিনামে নদের জমি রেকর্ড হয়েছে, তা বাতিল করে অবিলম্বে নদ পুনরুদ্ধার করা হোক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আছাদুল্লাহ বলেন, কেশবপুর অংশের নিচে থেকে মণিরামপুর ব্রিজ পর্যন্ত নদ ভালো আছে। উপরের দিকে কিছু অংশ দখল হয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দখলমুক্ত করলে প্রভাবশালীরা আবার দখলে নেবে। কারণ নদী পাহারা দেয়ার মতো লোকবল আমাদের নেই। এজন্য আমরা উচ্ছেদ করেই পুনঃখনন করতে চাই। কপোতাক্ষ নদের দ্বিতীয় পর্যায়ে হরিহরকে পুনঃখননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. রাজু আহম্মেদ বলেন, প্রকল্প অনুমোদন হলে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদটি খনন করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.