Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে নতুন আতঙ্ক শয়তানের নিঃশ্বাস, চক্রের তিন ইরানি নাগরিকসহ ৫ সদস্য গ্রেফতার

‘ডিভিল ব্রেথ’ চক্রের সদস্যরা যশোর-খুলনাসহ ৩২ জেলা এমনকি বিভিন্ন দেশেও তারা প্রতারণা করে এসেছে

0

প্রতিবেদক :
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণী হরিশপুর বাজারের ‘মরিয়ম স্টোর’। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই দোকানে গত ৮ এপ্রিল নারিকেল তেল কেনার কথা বলে দুজন ক্রেতা প্রবেশ করে। এরপর দোকানদারের সঙ্গে হ্যান্ড-শেক করে কৌশলে মানিব্যাংক থেকে টাকায় মোড়ানো নেশাদ্রব্য নাকের কাছে নিয়ে শুকিয়ে তাকে স্মৃতিভ্রম করেন। এরপর তাদের কথামতো দোকানদার শরিফুল ইসলাম নিজেই প্রতারকদের হাতে তুলে দেন ৬ লাখ টাকা। এসব নিয়ে দ্রুতই সটকে পরে প্রতারকরা। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব প্রতারক চক্র স্মৃতিভ্রম করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া এসব চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

রবিবার (৭ মে) সন্ধ্যায় ও রাতে ঢাকার ভাটারা থানা ও যশোর শহরের হোটেল সিটি প্লাজা থেকে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন : ইরানি নাগরিক খালেদ মহিবুবী (৫৪), সালার মাহবুবী (১৬), ফারিবোরয্ মাসুফি (৫৭), বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ঘ্যানাসুর উপজেলার সারোয়ারের ছেলে খোরশেদ আলম (৫৩) ও বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে সাইদুল ইসলাম বাবু (৩৫)। অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার, বিদেশী মুদ্রা, পার্সপোট ও বিভিন্ন আইডি কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত মুদ্রার মধ্যে রয়েছে : ৪,৩৫৯ মার্কিন ডলার, ৩২৫ ইন্ডিয়ান রুপি, ১৮ লাখ ৮০ হাজার ইরানি মুদ্রা, ১০০০ ইরাকের মুদ্রা, ১৮৫ নেপালি মুদ্রা, ১০০০ ভিয়েতনামের মুদ্রা ও ৫৪ হাজার ৭০০ বাংলাদেশি টাকা।

যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সোমবার বিকালে এই সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ জানায়, বাঘারপাড়ার মরিয়ম স্টোরের মালিক শরিফুল ইসলাম গত ৫ মে ৬ লাখ টাকার লুটে নেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে যশোর ডিবির এলআইসি টিম। এরপর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরে আসামিদের নাম ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর ঢাকা ও যশোর থেকে দুটি অভিযানে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, বিদেশি মুদ্রা, পার্সপোট ও বিভিন্ন আইডি কার্ড উদ্ধার, ছবি : কপোতাক্ষ

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে আসামিরা সংঘবদ্ধ ‘ডিভিল ব্রেথ’ শয়তানের নিঃশ্বাস প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা যশোর খুলনাসহ ৩২ জেলাতে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছে। এই প্রতারক চক্র শুধু বাংলাদেশ না, বিভিন্ন দেশেও তারা প্রতারণা করে এসেছে। এসব প্রতারক চক্র ২০১২ সাল থেকে এসব প্রতারণামূলক কাজ করে আসলেও সম্প্রতি ভয়াবহ মাদক স্কোপোলামিন প্রতারণা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রের তথ্য গণমাধ্যমকে জানায়, ছবি : কপোতাক্ষ

প্রেস ব্রিফিং-এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, ভয়াবহ মাদক স্কোপোলামিন; অপরাধ জগতে যেটির নাম ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের নিঃশ্বাস। ভয়াবহ এ মাদক পথচারীদের নিঃশ্বাসে প্রয়োগের মাধ্যমে ‘মাইন্ড কন্ট্রোল’করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে তাদের হাতে স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যমতে ইতোমধ্যে চক্রটি যশোরসহ ৩২ জেলাতে সংক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রদের মধ্যে তিন জন ইরানি নাগরিক। এই ইরানি নাগরিকরা প্রথমে ফেসবুকে বাংলাদেশি তরুণ ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে নেটওর্য়াক তৈরি করে। এরপর তারা মূলত তারা ট্যুরিস্ট ভিসাতে বাংলাদেশে আসেন। ট্যুরিস্ট ভিসাতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের কয়েকজনের সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে যেসকল বাণিজ্য এলাকাতে এসব প্রতারণা কাজ করে আসছিলেন। ডিভিল ব্রেথ শয়তানের নিঃশ্বাস নামে ক্যামিকেল দিয়েই তারা প্রতারণামূলক কাজ করে থাকে। এসব ইরানি নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও সম্প্রতি তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার পরেও বাংলাদেশের প্রতারক সদস্যদের নিয়ে তারা লুকিয়ে এতদিন এসব প্রতারণা কাজ করছিলেন।

প্রেস ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন যশোর ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকারসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.