যশোরে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে মারপিট, ফেসবুকের ছবিতে তোলপাড়!
গাঁজা বিক্রির প্রতিবাদ করায় ইউপি মেম্বর ইসমত আরা ঝুমুরের বাড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন
প্রতিবেদক :
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউপির এক মহিলা মেম্বরের বাড়িতে দুই কিশোরকে গাছের সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গাঁজা বিক্রিতে বাঁধা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার (৪ মে) দুপুরে মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের স্মরণপুর গ্রামে মহিলা ইউপি মেম্বর ইসমত আরা ঝুমুরের বাড়িতে তুলে নিয়ে ঐ দুই কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থী হলো : উপজেলার স্মরণপুর গ্রামের মৃত আবুল কামালের ছেলে আশিক (১৫) ও প্রতিবেশি সাহাবুদ্দিনের ছেলে আব্দুল হাকিম (১৬)। এদের মধ্যে আশিক চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। গাছে বেঁধে দুই কিশোরের নির্যাতনের ছবিটি শুক্রবার (৫ মে) রাতে ভাইরাল হয়। নির্যাতনের খবর জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা দুই কিশোরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ঐদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। স্থানীয় কিছু লোক
ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওই দুই কিশোরকে তুলে এনে
মারপিট করেছে। এ বিষয়ে আমি জড়িত নই।
-ইসমত আরা ঝুমুর, মহিলা মেম্বর, রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদ
সূত্র জানায়, মণিরামপুর উপজেলার স্মরণপুর গ্রামটি পার্শ্ববর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। ঝিকরগাছা উপজেলার জনৈক রবিউল ইসলাম মাদকের কারবার করে বলে অভিযোগ। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে মনিরামপুর উপজেলার রুহুল আমিন, তারেক, সাগরসহ কতিপয় যুবক। গত বৃহস্পতিবার মণিরামপুর উপজেলার স্মরণপুর গ্রামের খ্রিস্টান বাড়ির মোড়ে গাঁজা সেবন করছিল বাসুদেবপুর গ্রামের রনি ও দ্বীপ নামের দুই যুবক। এই দুই যুবকসহ আরও কয়েকজন প্রায়ই সেখানে গাঁজা সেবন করে। তারা পাশের গ্রাম থেকে এসে সেখানে গাঁজা সেবন করার দায় স্থানীয় যুবকদের উপর পড়ে। এ কারণে ঘটনার দিন রনি ও দ্বীপকে সেখানে এসে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দু’জনকে শায়েস্তা করতে রনি ও দ্বীপ রুহুল আমিন, সাগর ও তারেককে জানায়। ঐদিন দুপুরে দুই শিক্ষার্থী আশিক ও হাকিমকে ধরে মহিলা মেম্বর ঝুমুরের বাড়িতে নিয়ে যায় তারা। সেখানে দুই কিশোরকে গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করা হয়। মহিলা মেম্বর নিজেও দুই কিশোরকে মারপিট করে।
এ ব্যাপারে নির্যাতিত হাকিমের চাচা রুবেল হোসেন বলেন, গাঁজা বিক্রির প্রতিবাদ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে একটি চক্র। ওই চক্রের হোতা রবিউল ইসলাম মহিলা মেম্বর ইসমত আরা ঝুমুরের লোক হিসেবে পরিচিত। তারা মহিলা মেম্বরের কাছে আশিক ও হাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। মহিলা মেম্বরের নির্দেশে আশিক ও হাকিমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মেম্বরের বাড়ির উঠানের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় তোলপাড় হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ অভিযোগ কিংবা মামলা করতে নিরুৎসাহিত করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বর ইসমত আরা ঝুমুর বলেন, ঐদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। স্থানীয় কিছু লোক ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওই দুই কিশোরকে তুলে এনে মারপিট করেছে। এ বিষয়ে আমি জড়িত নই।
মনিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, দুই কিশোরকে মারপিটের ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।