যশোরে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কে বাধা, ইঞ্জেকশনে এসিড পুশ করে স্বামীকে হত্যা!
স্ত্রী ও প্রেমিক গ্রেফতার
প্রতিবেদক :
যশোরে অভিনব কায়দায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এসিড পুশ করে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্ত্রীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৯ মে) বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিন্ন কৌশলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার শিকার ওষুধ ব্যবসায়ী জহির হাসান গাজী (৩৮) যশোর শহরের বকচর হুশতলার মৃত হোসেন আলী গাজীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে আটক স্ত্রী শেফালী বেগম (৩৩) বকচর হুশতলা এলাকার মৃত শেখ ওমর আলীর মেয়ে এবং শেফালির প্রেমিক রবিউল ইসলাম (৪২) শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা।
আজ বুধবার (১০ মে) বিকেলে এ ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় ব্রিফিং করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) জুয়েল ইমরান। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে বকচর এলাকার বাসিন্দা জহির হাসানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ, ডিবি ও র্যাব ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। মৃত জহির আলীর বাম হাতের প্রতিটি শিরায় কালো দাগ পরিলক্ষিত হওয়ায় মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
এ কারণে থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথভাবে নিবিড়ভাবে তদন্ত শুরু করে। নিহত জহির হাসান গাজীর স্ত্রী শেফালী বেগমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার স্বামী জহির হাসানকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। শেফালী জানান, শংকরপুরের রবিউলের সাথে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী জহির হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। এরপর পূর্ব থেকে সংগৃহিত মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ভেঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পাওয়া এসিড ইনজেকশন সিরিঞ্জে নিয়ে ঘুমন্ত জহির হাসানের বাম হাতের শিরায় পুশ করেন। এসিড প্রয়োগে অল্প সময়েই জহির মৃত্যুবরণ করেন।
পরে রাতে শেফালি জহির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে পরিবারকে জানান। তখন জহিরের ছোটভাই ফেরদৌস রাত দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জহিরের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
![](https://kapotakkho.com/wp-content/uploads/2023/05/dainikkapotakkho_10.5.23_murder_2.jpeg)
যশোর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুর রহমান বলেন, নিহতের শরীরে ইনজেকশনের ক্ষত দেখা গেছে। ক্ষত থেকে রক্তপাত হবার চিহ্নও পাওয়া গেছে। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।
এদিকে, আসামি শেফালীকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আলামত হিসেবে ভাঙ্গা মোবাইল, ব্যাটারির অংশ বিশেষ, নিহতের ঘর থেকে এবং মনিহার ফলপট্টি রোড থেকে হত্যাকাজে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ঘুমের ওষুধের খালিপাতা এবং আসামির কর্মস্থল মাতৃসেবা ক্লিনিক থেকে নমুনা সিরিঞ্জ ও ঘুমের ঔষধ জি-ডায়াজিপাম ৫ মিলিগ্রাম জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের ভাই গাজী শাহনেওয়াজ কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
এদিকে, জহির হাসান হত্যাকাণ্ডের পর এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শেফালীর প্রেমিক রবিউল ইসলামকে (৪২) আটক করেছে র্যাব। রবিউল খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সদরের মৃত আব্দুর সরদারের ছেলে ও যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা। বুধবার বিকেলে শংকরপুর থেকে তাকে আটক করা হয়। র্যাব জানিয়েছে, শেফালী এবং রবিউল পরিকল্পনা করে জহিরকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।