Take a fresh look at your lifestyle.

যশোর জেলা রেণুপোনা উৎপাদনে এবারও দেশে লিড দেবে

উৎপাদনে ২৬ হ্যাচারি, রেণুর ৬০ শতাংশ, মাছের অর্ধেক এই জেলার

0

প্রতিবেদক :

মাছের রেণুপোনা উৎপাদনে যশোর জেলা এবারও দেশে লিড দেবে। প্রচন্ড তাপদহ কেটে বহু প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা মেলায় বাম্পার উৎপাদনের আশা করছে হ্যাচারি মালিক ও মৎস্য বিভাগ। এবার পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন বা এক লাখ কেজি। এই পরিমাণ দেশের মোট রেণুপোনার চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ। মাছ ভেদে প্রতি কেজি রেণু থেকে তিন থেকে চার লক্ষ কেজি পোনা উৎপাদন হয়ে থাকে।

রেণুপোনার হ্যচারির সারা দিনরাতের উৎপাদন আর ভোর থেকে দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীদের আনোগোনায় রীতিমতো জমে উঠেছে শহরের চাঁচড়ার মৎস্যপল্লী। যশোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড, থাইসরপুটি, মিরর কার্প, জাপানি, চিতল, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কৈ, থাই কৈ, পাঙ্গাস প্রভৃতি মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকে। নতুন জি-থ্রি রুই আশার আলো ছড়াচ্ছে মৎস্য খাতে। এর উৎপাদন অন্যান্য রুই মাছের চেয়ে অনেক বেশি বলে চাষিদের আগ্রহও অনেক বেশি এই মাছ নিয়ে। ওয়ার্ল্ড ফিস নতুন জাতের এ রুইয়ের পোনা বাজারে এনেছে।

সারাদেশের মধ্যে যশোরের রেণুপোণার মান অত্যন্ত উন্নত।

এজন্য এখানকার উৎপাদিত রেণুর চাহিদা সারাদেশে রয়েছে।

নতুন জাতের জি-থ্রি আমাদের মাছের চাহিদা পূরণে ভালো ভূমিকা রাখবে।

আমরা আশা করছি রেণুপোনা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন করে

দেশের মাছের চাহিদা পূরণে যশোর বরাবরের মতো লিড দেবে।

-ফিরোজ আহম্মেদ , জেলা মৎস্য কর্মকর্তা

সূত্র জানায়, মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু গত দু’মাসের তীব্র তাপদাহে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হয়। দুশ্চিন্তার বলিরেখা ফুটে ওঠে এ খাতের সংশ্লিষ্ঠ সকলের চোখেমুখে। চলতি মৌসুমে রেণুপোনা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখার হাত ধরে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাতে দুশ্চিন্তার কালোমেঘ কেটে গেছে। পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনে গেছে এখানকার ২৬টি হ্যাচারি।

চাঁচড়া মৎস্যপল্লীতে রেণুপোনার হ্যাচারি, ছবি : কপোতাক্ষ

দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণুপোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে নানা কারণে চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর হ্যাচারির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। একসময় এখানে ৭৮টি হ্যাচারি ছিল। ৩-৪ বছর আগেও ৩৪টি হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন হতো। কিন্তু এখন সংখ্যা ২৬টিতে নেমে এসেছে। রেণুপোনার অপরিহার্য উপাদান হরমোন পিটুটারি গ্লান্ট (পিজি), খাদ্যের মূল্যসহ সকল উপাদানের মূল্যবৃদ্ধির বিরুপ প্রভাব পড়েছে এই খাতের উৎপাদনে।

নার্সারিতে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে, ছবি : কপোতাক্ষ

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ফাতিমা হ্যাচারির স্বত্ত¡াধিকারী ফিরোজ খান জানান, যশোরে গতবছর আমরা এক লাখ ২০ হাজার কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করেছিলাম। এবছর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। কেননা মৌসুমের শুরুতে দুইমাস ধরে চলেছে প্রচন্ড গরম। এতে ডিম উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি হবার পর ২৬টি হ্যাচারি উৎপাদন শুরু করেছে। তবে উৎপাদনে গেলেও আমরা বিদ্যুৎ বিল ও পোনার হরমোন ইনজেকশন পিজি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা এগুলো ভারত থেকে আসে। দাম অনেক চড়া। আগে আমরা বিদ্যুৎবিল দিতাম কৃষিতে। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে শিল্পরেটে। আগে যেখানে একটা হ্যচারির বিদ্যুৎবিল হতো ৪-৫ হাজার টাকা, এখন সেটা ৬০-৭০ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহুগুণ। এছাড়া মাছের হরমোন ইনজেকশন পিজি আগে প্রতিপিস ছিল ৮ টাকা, সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।

চাঁচড়া মৎস্যপল্লী সংলগ্ন সড়কে পোনা বেচাকেনা, ছবি : কপোতাক্ষ

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণুপোনা উৎপাদনেও যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ২৫টি হ্যাচারিতে পোণা উৎপাদন হচ্ছে। এসব পোনার এক-তৃতীয়াংশরও কম যশোরের চাহিদা। বাকিটা দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। যশোরে ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টরের মোট ৫১টি বাওড় রয়েছে। মূলত এসব বাওড় থেকে মাছ উৎপাদন হচ্ছে। হ্যাচারি ও বাওড়ের পাশাপাশি যশোরে ৫-৬ হাজার নার্সারি রয়েছে। জেলার ২ লাখ লোক মাছ উৎপাদন, চাষ এবং এই সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এখানকার উৎপাদিত মাছ দেশের অর্ধেক চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, সারাদেশের মধ্যে যশোরের রেণুপোণার মান অত্যন্ত উন্নত। এজন্য এখানকার উৎপাদিত রেণুর চাহিদা সারাদেশে রয়েছে। নতুন জাতের জি-থ্রি আমাদের মাছের চাহিদা পূরণে ভালো ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি রেণুপোনা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন করে দেশের মাছের চাহিদা পূরণে যশোর বরাবরের মতো লিড দেবে।

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.