Take a fresh look at your lifestyle.

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি!

জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা

0

অভয়নগর প্রতিনিধি :
যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ঠ প্রকৌশল বিভাগও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন। বলছেন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ পেলেই নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পরিত্যক্ত ঘোষণার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে চিকিৎসাসহ সব কার্যক্রম।

সূত্র জানায়, নওয়াপাড়া নৌবন্দর ঘেরা মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাধীনতার আগে নির্মাণ করা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন জরাজীর্ণ। ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফেটে গেছে মূল ভবনের দেয়াল এবং পিলার। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা।

১৯৭৮ সালে ১০ বিশিষ্ট শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের ৪টি বিভাগে গড়ে সোয়া একশ’ রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরে চিকিৎসা নেন ৭ শতাধিক রোগী। কিন্তু দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ভবনটির ছাদের বিভিন্নস্থানে পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে পড়েছে। ভবনটির ২০-২৫টি স্থানে এমন জীর্ন দশা। পুরাতন ভবনের সিলিং খসে খসে পড়ছে বার বার। হাসপাতালের অভ্যন্তরে রোগীর বেডের পাশেও কয়েকবার পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারের সিলিংয়ে বড়ধরনের ফাটল ধরেছে। ইতিমধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে বড় একটি অংশ। দ্বিতীয়তলার সিড়ি সংলগ্ন, পুরুষ, মহিলা ওয়ার্ড ও স্টাফ রুমের সিলিং প্রতিদিন খসে খসে পড়ছে। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শীতকালে কনকনে ঠান্ডা বাতাসেও রোগীরা চরম দুরাবস্থায় থাকেন। ঝুঁকিপুর্ণ ভবনটি প্রতিনিয়ত আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় রোগীদের। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারী ও শিশু ওয়ার্ডের সিলিংয়ের অবস্থা। উপরে ভাঙাচোরা ছাদের নিচে নারী-শিশুদের দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। যদিও কর্তৃপক্ষ সতর্কতা অবলম্বনে সবচেয়ে বিপদজনক কয়েকটি সিট খালি রেখেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডের সামনের জীর্ণদশা, ছবি : কপোতাক্ষ

রোগী ও স্বজনরা জানায়, অসুস্থতা সারাতে হাসপাতালে এসে প্রতিমূহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি তালতলা এলাকার আয়নাল জমাদ্দার জানান, দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় হঠাৎ উপর থেকে বড় একটি ভাঙ্গা টুকরা প্লেটের উপর খসে পড়েছে। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রাশিদা বেগম জানান, সেদিন রাতে মাথার উপরে সিলিং খসে পড়ে আহত হয়েছি। একজন নার্স জানান, স্টাফ রুমের সিলিং ভেঙ্গে আমি নিজে আহত হয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান ভবনটির রুগ্নদশার কথা স্বীকার করে বলেন, পুরাতন ভবনের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। আমার সামনেও একবার পলেস্তারা খসে পড়েছে, অল্পের জন্য রোগীর গায়ে পড়েনি। রোগী, ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী আমরা সবাই ঝুঁকির মধ্যে আছি। কখন কী হয় বলা যায় না। তিনি আরও জানান, তিনমাস আগে ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে ঝুঁকির কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা পরিদর্শন করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে অন্যখানে রোগীদের সরিয়ে নিতে বলেছেন। কিন্তু ১৪ শয্যার পৃথক একটি ভবনে এত রোগীকে সরিয়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না।

অপারেশন থিয়েটারের সামনেরও করুণ হাল, ছবি : কপোতাক্ষ

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মোবাইলে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে আমরা সাথে সাথে পরিদর্শন করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখেছি। এজন্য ঐ ভবনটি ব্যবহার না করবার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণনালয়কে চিঠি দিয়ে বরাদ্দ চেয়েছি। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ভবনের বরাদ্দ চলে আসবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য জেলা কনডেমনেশন কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়েই লাইন কেটে দেন। পরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা প্রশাসক ও জেলা কনডেমনেশন কমিটির সভাপতি মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা কনডেমনেশন কমিটিতে এ ধরনের কোনো চিঠি সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর পাঠায়নি।

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.