Take a fresh look at your lifestyle.

বেনাপোল কাস্টমসের পরীক্ষা দিতে পারলেন না হাজারও চাকরি প্রত্যাশী

সূক্ষ্ম কারচুপি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ, আদালতে মামলার হুশিয়ারি

0

প্রতিবেদক :
শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও লিখিত পরীক্ষা প্রবেশপত্রে সিল না থাকার কারণে যশোর বেনাপোল কাস্টমসের সিপাই পদের লিখিত পরীক্ষা দিতে পারলেন না হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশী। তাদের অভিযোগ প্রথম প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলেও কেবলমাত্র একটি সিল না থাকার কারণে তাদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম কারচুপি ও আর্থিক লেনদেন হয়েছে এমন অভিযোগ তাদের। বিষয়টি নিয়ে তারা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এমনকি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়েরের হুশিয়ারি দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার (২৬ মে) যশোর শহরের ৮টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা শুরু হওয়া পরীক্ষা চলে সাড়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের এমন ঘটনা ঘটে। তবে কাস্টম কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষার্থীদের ভুলেই এমন সমস্যা। এই দায় কাস্টম নিবে না।

কাস্টম হাউস বেনাপোল সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ২০১৬ সালে এবং পরে ২০২২ সালে ৫৬টি সিপাই পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কাস্টম হাউস বেনাপোল। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় অর্ধলাখ চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। এরপর ২০১৯ সালে প্রথমে তাদের শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করে তাদের প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়। একই বছর তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ প্রকাশিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার আগেই স্থগিত করা হয়। এরপর গেল ২০২২ সালে একই পদে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কাস্টম হাউস বেনাপোল। সেখানে উল্লেখ করা হয় ইতিপূর্বে ২০১৬ সালে এ দপ্তর থেকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় আবেদিত প্রার্থীদের মধ্যে যারা যোগ্য বিবেচনায় প্রবেশপত্র প্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন এবং তাদের পুনরায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তারা ইতিপূর্বে প্রাপ্ত প্রবেশপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একইসাথে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর মোবাইল নাম্বারে পরীক্ষাসহ সকল তথ্য জানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু আজ শুক্রবার (২৬ মে) অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ২০১৬ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রাপ্ত সকলকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। কেবলমাত্র যাদের প্রবেশপত্রের নিচে (লিখিত পরীক্ষার তারিখ, সময় ও কেন্দ্র জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও কাস্টম হাউস বেনাপোল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে) এমন লেখা সম্বলিত সিল মারা ছিল, তাদেরকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা না দিতে পারাদের অভিযোগ কাস্টম কর্তৃপক্ষ রাতের আঁধারে অথবা অতি গোপনীয়তার মাধ্যমে প্রবেশপত্র প্রাপ্তদের মধ্যে থেকে বাছাই করেছেন। সিল মারার বিষয়টি কাস্টম হাউস বেনাপোলের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়নি। তাদের মোবাইল ফোনে জানানোর কথা থাকলেও জানানো হয়নি। এক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করেন তারা।

শান্তিপূর্ণভাবে যশোরে সিপাহী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পরীক্ষার্থীরা যেটি অভিযোগ করছেন সেটি সম্পন্ন ভুল।

পরীক্ষার্থীদের ভুলেই এমন সমস্যা। এই দায় কাস্টম নেবে না।

-আব্দুর রশিদ, যুগ্ম কমিশনার, বেনাপোল কাস্টম হাউস

যশোর শহরের ৮টি কেন্দ্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ২০১৬ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদিতদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল। যাদের প্রবেশপত্রে (লিখিত পরীক্ষার তারিখ, সময় ও কেন্দ্র জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও কাস্টম হাউস বেনাপোল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে) এমন লেখা সিল স্বাক্ষর ছিল, তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। যাদের প্রবেশপত্রে সিল ছিল না, তাদের গেটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও, পরীক্ষার হলে মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অথচ কেন্দ্রটির বাইরে গেটে সাটানো সিট প্লানে তাদের রোল নাম্বার উল্লেখ ছিল। পরীক্ষা দিতে না পারা জয়পুরহাট থেকে আসা আলমগীর কবির, বগুড়া থেকে আসা আবু সুফিয়ান, ভোলা থেকে আসা নিলাদ্রী বিশ্বাস, গাজীপুর থেকে আসা সোনিয়া পারভিন, খুলনা থেকে আসা সানজিদা আফরিন, পাবনা থেকে আসা উলফাত আলী, বরিশাল থেকে আসা সুমন সরকারসহ অসংখ্য (প্রবেশপত্র প্রাপ্ত) পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের অভিযোগ কাস্টম কর্তৃপক্ষ যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদেরকে বাছাই করে অতি গোপনে তাদের প্রবেশপত্রে সিল মেরে চিহ্নিত করেছেন। কেবলমাত্র তাদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সবকিছু সঠিক থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো না। এর কারণটা কি? সেটি কাস্টম কর্মকর্তাদের বলতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন যশোর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলবো। অবৈধ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করবো।

পরীক্ষা চলাকালে গেটের বাইরে থাকা পরীক্ষা দিতে না পারা ব্যক্তিরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। অবৈধ পরীক্ষা মানি না মানবো না। নিয়োগ বাণিজ্যের পরীক্ষা বন্ধ কর করতে হবে। কেন্দ্র দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বাইরে বিক্ষোভের বিষয় জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন, কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে যশোরে সিপাহী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যেটি অভিযোগ করছেন সেটি সম্পন্ন ভুল। পরীক্ষার্থীদের ভুলেই এমন সমস্যা। এই দায় কাস্টম নেবে না।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.