Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে ছড়িয়ে পড়েছে কলেরা

উপদ্রুত অঞ্চলে আবারও আইইডিসিআর গবেষকদল

0

প্রতিবেদক :
যশোরে উদ্বেগজনকভাবে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ মনে করা হলেও এর লাগামছাড়া বিস্তারে স্বাস্থ্যবিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। জাতীয় রোগতত্ত¡ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর রোগতত্ত¡ গবেষণাদল দুইমাসে দুই দফায় উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন করেছে। প্রথম পরিদর্শনের গোপনীয় প্রতিবেদনে গবেষকদল প্রধান ডা. মোসাম্মাৎ জেবুন্নেসা কলেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দ্বিতীয়দফায় আরেকটি দল বর্তমানে যশোরে অবস্থান করে নমুনা সংগ্রহের কাজে রয়েছে।

পৌরসভার পানিতে আয়রনের সমস্যা আছে। আমরা লাইন ওয়াশ করে

পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছি। আর পৌরসভার পানির কারণে

ডায়রিয়া বা কলেরা হচ্ছে, এটা ঠিক না। এসব রোগীদের

বেশিরভাগই পৌর এলাকার বাইরের।

-হায়দান গনি খান পলাশ, মেয়র, যশোর পৌরসভা

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এপ্রিল মাসে গড়ে ২৮ জন রোগী ভর্তি হলেও চলতি মাসে বেড়ে ৪০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া প্রায় দ্বিগুণ রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। প্রচন্ড গরমে পানিবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সববয়সের মানুষ। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা পাঁচটি। শয্যা না পেয়ে করিডোর ও মেঝেতে চলছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা। এরই মধ্যে করোনার রেড জোন ওয়ার্ডকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রুপান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসক-নার্স সেবা দিতে হিমশিম খেলেও কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন না। নির্ধারিত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা সংকটে হাসপাতালের তৃতীয় তলাতে একটি নতুন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তবে কলেরার স্যালাইনের সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান। কলেরার বিস্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইইডিসিআর-এর মার্চ মাসের পর্যবেক্ষণের ‘আউটব্রেক কন্টিনিউ’ করছে।

আইইডিসিআর-এর মার্চ মাসের পর্যবেক্ষণের

‘আউটব্রেক কন্টিনিউ’ করছে : হাসপাতাল

– ডা. হারুন অর রশিদ, তত্ত্বাবধায়ক, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

সূত্র জানায়, ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতার রোগী বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের অনুরোধে জাতীয় রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর একটি রোগতত্ত্ব গবেষণাদল উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের তথ্যউপাত্ত নিয়ে যাচাই করেন এবং সিভিল সার্জন অফিসের ডিজিটাল সার্ভারের তথ্য যাচাই করে রোগের প্রাদুর্ভাব ও ধরন নির্ধারণে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গবেষকদল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে ১৩ জন রোগীর মলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন এবং তার মধ্যে ৮টি নমুনায় কলেরা রোগের জীবাণু খুঁজে পান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘ডিস্ট্রিক্ট র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ সক্রিয়

করা হয়েছে এবং উপদ্রুত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের

মাধ্যমে খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।

-ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, সিভিল সার্জন 

২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের তথ্য যাচাই করে দেখা যায় পৌরসভার বারান্দিপাড়া, বেজপাড়া, আরবপুর, সিটি কলেজ পাড়া, মোল্লাপাড়া ও খড়কি এবং পৌরসভার অদূরে চাঁচড়া এলাকায় রোগীর আধিক্য দেখা যায়। এ অঞ্চলের বিভিন্ন উৎস থেকে ৯টি পানীয় জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে একটি নমুনা রোগীর ঘরে ব্যবহৃত পানীয় জল, ৫টি নমুনা পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির বিভিন্ন স্থানের, ২টি নমুনা সাবমার্সিবল টিউবওয়েলের ও একটি নমুনা পাড়ার অনেকেই পানি নেন এমন একটি হাতে চাপা টিউবওয়েল থেকে সংগ্রহ করা হয়। শুধুমাত্র হাতে চাপা টিউবওয়েল ব্যতিত অন্য সকল পানিতে ফিকাল কলিফর্ম জীবানুর অস্তিত্ব পরীক্ষায় ধরা পড়ে। শহরের মোল্লাপাড়া অঞ্চল থেকে পৌরসভার পানি ও সাবমার্সিবলের পানিতে সংগ্রহকৃত ৩টি নমুনাতে কলেরা জীবানুর অস্তিত্ব পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।

আইইডিসিআর-এর গবেষকদল এ পরিস্থিতিতে ৬টি সুপারিশ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে : পৌরসভার পানির লাইনের লিকেজ ও দূষণের উৎস খুঁজে তা সমাধানের ব্যবস্থা, পৌরসভার পানিতে নিয়মিত ক্লোরিন দিয়ে বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা, উপদ্রæত অঞ্চলে পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ (ক্লোরিন ট্যাবলেট) সরবরাহ ও বিতরণের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ পানির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার রাখা এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ লাইনের মধ্যে দূরত্ব নিশ্চিত করা।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন, ছবি : কপোতাক্ষ

সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘ডিস্ট্রিক্ট র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ সক্রিয় করা হয়েছে এবং উপদ্রুত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তবে যেহেতু খাবার পানিতেই রোগের জীবাণু আছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে সেহেতু সেটি ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অবশ্যই পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দান গনি খান পলাশ বলেন, পৌরসভার পানিতে আয়রনের সমস্যা আছে। আমরা লাইন ওয়াশ করে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছি। আর পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়া বা কলেরা হচ্ছে, এটা ঠিক না। এসব রোগীদের বেশিরভাগই পৌর এলাকার বাইরের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.