আসছে মোজাফফর জাতের লিচু, বোম্বাই পাক ধরবে আরও পরে
মেহেরপুরে হবে ৩২ কোটি টাকার লিচু
দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
আম-কাঠালের পাশাপাশি মেহেরপুরের লিচু সুস্বাদু। চাহিদাও ভালো। ভৌগলিক কারণে মেহেরপুরের লিচু অন্য জেলার আগেই বাজারজাত করা যায়। দাম ভালো পাবার কারণে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু চাষ। মেহেরপুরের লিচুর কদর হিমসাগর আমের মতোই। লিচু ক্ষণকালীন ফল। তবে আগাম উৎপাদন ও অধিক দামের কারণে লিচু চাষে কৃষকরা অধিক উৎসাহী হয়ে পড়েছে। গত তিন বছরে ৩শ’ বিঘা জমিতে লিচুর চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে নতুন ৩শ’ বিঘায় চাষ হওয়া গাছেও লিচু ধরবে। এই জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশি ও আটি মোজাফ্ফর জাতের (গুটি লিচুও বলা হয়ে থাকে) চাষ আছে। সাধারণত বোম্বাই ও মোজাফফর লিচুর স্থানীয় জাতগুলোই এই নামে পরিচিত। তবে প্রখ্যাত লিচুর মধ্যে আতা বোম্বাই সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট ও ছোট বিচির ও টকটকে লাল এই লিচু বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লিচুর অন্যতম।
প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বসে চাষ করে। এই লিচুর চাষ বর্তমানে সম্প্রসারিত হচ্ছে। উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ থেকে টিএস-৪ ও চায়না ১৪ প্রজাতির লিচু এখন ব্যাপক। এগুলোও উন্নত জাত এবং বোম্বাই লিচু হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। এ সপ্তাহেই বাজারে উঠবে মোজাফফর জাতের লিচু। তার দিন পনেরো পরেই বোম্বাই লিচু পাক ধরবে। পাওয়া যাবে বাজারে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, লিচুর ভারে ডাল নুইয়ে পড়েছে। জেলা শহরের নতুনপাড়ার লিচু চাষি হেকমত আলী জানান, তার ৫ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান। লিচুগাছে ফুল আসার আগেই গত জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ টাকায় লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বাগান।
লিচু বাগান ক্রেতা মাবুদ আলী জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অন্তত ৮ লাখ টাকার কেনা বেচা হবে। তিনি জানান, এই একটি মাত্র ফল একমাস সময় যত্ন-আত্মি করতে হয়। লিচুর বড় শত্রু বাদুড় আর চামচিকা। লিচুতে রঙ ধরলেই একরাতেই চামচিকাতে লিচু কেটে নষ্ট করে দিতে পারে। এজন্য রাত জেগে বাদুড় চামচিকা প্রতিরোধ করতে হয়। অতিরিক্ত তাপদাহেও লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যায়।
ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি আব্দুল মান্নান জানান, তার তিনবিঘা জমিতে লিচুর বাগান। চলতি বছরসহ পরবর্তী দুই বছরের জন্য আগাম ফল বিক্রি করে দিয়েছেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায়।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান খান বলেন, মেহেরপুরে ৮০ ভাগ বাগানে আটি লিচু চাষ হয়। এই লিচুর বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে : আটি মোজাফ্ফর জাতের লিচু আগাম পাকে। সংখ্যায় বেশি ধরে। পোকার আক্রমন কম হয়। ফলের ৭০ ভাগই রসালো। জেলায় ৩শ’ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ আছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ৪শ’ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা।