পদ্মা সেতু ছুঁয়ে রাজধানী যাত্রায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যশোরবাসীর
প্রতিবেদক :
প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে আগামী ২৫ জুন। এর পরদিনই উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু স্বপ্নের এই সেতু দিয়ে ঢাকা যেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে যশোরবাসীর। পরিবহন মালিকরা সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করায় পদ্মা সেতু উপভোগ করতে এ জনপদের সাধারণ মানুষের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হবে।
এদিকে, পদ্মা সেতুর টোল সংযোজন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এসব বাস সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করবে। কিন্তু সেই রুটে যশোর নেই। এজন্য যশোরের মানুষের পরিবহনে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকা যেতে অপেক্ষা যে বাড়ছে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের কথা ভিন্ন। তারা সেতু দেখতে দেখতে পার হবেন পদ্মা।
যশোরাঞ্চলের মানুষে সড়ক পথে এতোদিন পাটুরিয়া-দৌলদিয়া হয়ে সড়কপথে রাজধানীতে যেতেন। সড়ক পথে এটি ছিল প্রধান মাধ্যম। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মার উপর সেতু নির্মিত হওয়ায় এখন এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ হবে। যশোর থেকে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় যাওয়া যাবে রাজধানী ঢাকায়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি যাত্রার ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। সব মিলিয়ে সুফল পাবে খুলনাসহ ২১ জেলার মানুষ। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন সম্প্রাসরণ হবে। জীবন-মান উন্নত হবে। আর এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত এই এলাকার মানুষ। কিন্তু যশোরবাসীর অপেক্ষা করতে হবে আরো সময়।
বাস মালিকরা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি পদ্মা সেতু দিয়ে তারা গাড়ি ছাড়বেন কিনা। কেননা যশোর থেকে যেসব পরিবহন ছেড়ে যায় সেখানে মাগুরা জেলার যাত্রীরাও উঠেন। এ কারণে সব পরিবহন হয়তো পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে না। এজন্য কবে থেকে যশোর থেকে নড়াইল হয়ে সড়ক পথে পরিবহন চলবে সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর মিলছে না।
যশোরের ঈগল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা কোন পথ ব্যবহার করবো। কেননা আমাদের পরিবহনগুলোর যাত্রী মাগুরা জেলার মানুষও। তাছাড়া নড়াইলের কালনা সেতু এখনও চালু হয়নি, পদ্মা ও কালনা সেতুর টোল কত হবে আর আমাদের জ্বালানি খরচ কি পরিমাণ বাঁচবে তার হিসাব করে গাড়ি চলাচল করবে। তবে কিছু গাড়িতো চলাচল করবেই। তবে সেটা সময় বলে দেবে।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলবে কিনা তা মালিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যারা গাবতলী বা মিরপুর এলাকায় যাবেন তারাতো সায়েদাবাদে যাবেন না। সব হিসাব করে মালিক পক্ষ আমাদেরকে জানাবেন।
অন্যদিকে, ৭ জুন বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা সেতুর টোল সংযোজন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এসব বাস সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করবে। তবে নতুন এই ভাড়া অন্যান্য আন্তঃজেলা টার্মিনালের বাসের জন্য নয়, শুধু ঢাকার সায়দাবাদ থেকে চালু হওয়া বাসের জন্য প্রযোজ্য হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনার ভাড়া ৬৪৯ টাকা, ঢাকা-বরিশাল-পিরোজপুরের ভাড়া ৫৩৪ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-পিরোজপুরের ভাড়া ৬২৮ টাকা, ঢাকা-ভাঙ্গা-মাদারীপুরের ভাড়া ৩২৭ টাকা ও ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা-সাতক্ষীরার ভাড়া ৬৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তে যশোর রুট নেই। ফলে যশোর থেকে পরিবহনে আপাতত পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা সবজির ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। এদিকে কালনা সেতুও এখনো নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। ফলে এ রুটে যানবাহন চলাচল করা নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতি মনোযোগ দিচ্ছে না।
যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, আমরা পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চলাচল করলে জ¦ালানি খরচ কমবে। কিন্তু টোল বেশি হওয়ায় কবে থেকে যশোর থেকে বাস চলাচল শুরু হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে যশোরে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। জেলাটিতে সব ধরণের উৎপাদিত পণ্যে সহজে ঢাকাতে পৌঁছাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কালনা সেতু দ্রুত উদ্বোধন হবে। ততোদিন যশোর থেকে মাগুরা হয়ে ফরিদপুর দিয়ে শরীয়তপুরের মাওয়া ঘাটে যেতে পারবে। পরিবহন মালিকরা অবশ্যই এ বিষয়ে পজেটিভ সিদ্ধান্তে আসবে।
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ পুরো বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমি যদি শুধু আমার নিজের কথা বলি…পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর থেকে আমি ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকায় চলে যেতে পারব। বিমানে যদি যাই, তাহলেও গন্তব্য যেতে কম-বেশি একই সময় লাগবে। এ তথ্য থেকেই বোঝা যায় মানুষের যোগাযোগ কতটা সহজ হতে চলেছে। এ সেতু আমাদের মধ্যে নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে।