প্রতিবেদক :
যশোরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দুটি উপজেলায় ৫টি বাল্যবিয়ের ঘটনায় পৃথক পাঁচজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাই আদালত। চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় পৃথক পাঁচটি ঘটনায় আদালত পরিচালনা করেন বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী এবং চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর দুটোর দিকে চৌগাছা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী আন্দুলিয়া গ্রামে একটি বাল্যবিয়ের আয়োজনের সংবাদ পেয়ে সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সেখানে অভিযান চালান এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের নানা মো. লিয়াকত আলীকে (৫০) নয় মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে আরেকটি বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানে হানা দেন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এসময় বরের মামা আজিজুল ইসলামকে (২৮) ৯ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয় এবং মেয়েপক্ষের কাছ থেকে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হবেনা মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাতে একই উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা উত্তরপাড়া গ্রামের ১০ম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। মেয়েটি বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরিবারের সদস্যরা একপ্রকার জোর করেই তাকে বিয়ে দিচ্ছিল। বর পাশর্^বর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি একটি মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। দ্রুত বিয়েটি বন্ধের নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি)। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের দাদা আব্দুস সালামকে (৬৫) ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। একইসাথে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারদন্ড দেয়া হয়। এই বিয়ে বন্ধ করেই এসিল্যান্ড রওনা হন উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া গ্রামে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের আয়োজন করেন অভিভাবকরা। তবে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌঁছানোর আগেই কনেকে নিয়ে দ্রুত বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন বর ও বরযাত্রীরা। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের বাবা মহিউদ্দিনকে (৪৬) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। একইসাথে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সংবাদ পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে দুটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্য দুটির একটিতে কনেকে নিয়ে বর ও বরযাত্রীরা বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। সর্বশেষটিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বরযাত্রীরা বিয়েবাড়িতে অবস্থানকালে বরের মামাকে কারাদন্ড দেয়া হয় এবং মেয়েপক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। একটিতে মেয়ের নানাকে ৯ মাসের জেল দেয়া হয়। একটিতে কনের দাদা ও অপরটিতে কনের বাবাকে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৮ ধারায় এই সাজা দেয়া হয়েছে। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বাল্যবিয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, যশোরের বাঘারপাড়ায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার অপরাধে তার চাচাকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যামাণ আদালত। আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই) বেলা তিনটার দিকে উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী। দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন ওই গ্রামের মৃত তাইজেল ইসলামের ছেলে আব্দুল মোমিন (৪৮)। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে খবর আসে উত্তর চাঁদপুর গ্রামে কনের বাড়িতে বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এমন খবরে ইউএনও’র নেতৃত্বে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ মোমিন হোসেন ও রাশেদ সরদার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাদের উপস্থিতিতি টের পেয়ে বর ও কনেসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। তবে পুলিশি অভিযানের আগেই বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে কনের চাচাকে আটক করা করে পুলিশ। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করায় তাকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, নাবালিকা মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়ায় তার চাচাকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।