যশোরে সম্পদ গোপন করায় স্ত্রীসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তার কারাদন্ড
প্রতিবেদক :
যশোরে ১৮ লাখ টাকার সম্পদ গোপন করার দায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর পৃথক মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছে আদালত। দুদকের মামলায় আজ সোমবার (২৯ আগস্ট) স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) সামছুল হক এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি আশরাফুল আলম বিপ্লব।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট ও মণিরামপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে মকবুল হোসেন এবং তার স্ত্রী সালেহা বেগম। এ দম্পতি বর্তমানে যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার বাড়িতে বসবাস করেন।
২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামি মকবুল হোসেন ১৯৭৮ সালের ১ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতি পান এবং ২০০৯ সালে ২৯ মে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরিকালে অবৈধ উপায়ে নিজের, স্ত্রী সালেহা বেগমের নামেসহ নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এ সম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টম্বর মকবুল দম্পতির কাছে নোটিশ দেয় দুদক। ১৮ সেপ্টেম্বর উপ-পরিচালক দুদকের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেন। কিন্তু ৯টি কলাম পূরণ করলেও ১৩টি কলাম পূরণ না করে তিনি অসামঞ্জস্য একটি হিসাব বিবরণী জমা দেন। যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার বাড়িসহ বেশকিছু সম্পদ অর্জনের আয়ের উৎস এবং কার নামে কি পরিমান রয়েছে তাও উল্লেখ না করেই প্রতিবেদন জমা দেন। এ অবস্থায় বাড়িঘরের তথ্য ও সম্পদের মূল্য জানতে ২০১৫ সালের ১ জুন যশোর পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেয় দুদক। পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শিকদার মোকলেছুর রহমান এবং কার্য-সহকারী (বাড়ি/ঘর) সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে ৬ এপ্রিল দুদকে প্রতিবেদন জমা দেন। এতে হিসাবের গড়মিল পাওয়া যায়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয় মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম বাড়ি ও দোকানের মূল্য দেখান ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকৃতমূল্য ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৫২০ টাকা। এতে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ টাকা ৩১ পয়সা তথ্য গোপন করা হয়। মামলাটি বাদী নিজেই তদন্ত করেন এবং ২০১৬ সালের ২৮ জুন আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
মামলার রায়ে মকবুল হোসেনের ২৬(২) ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২৭(১) ধারায় চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন । এছাড়া তার স্ত্রী সালেহা বেগমের ২৭(১০৯) ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। একইসাথে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ টাকা ৩১ পয়সা রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেন।
রায়ের সময় দুজনই আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।