শাহিন আহমেদ, অভয়নগর :
অভয়নগরের চেঙ্গুটিয়ার বুড়োর দোকান টু বাহিরঘাট সড়কটি বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। যুগের পর যুগ সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় সড়ক জুড়ে বড় বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই খানা-খন্দে জমে যায় হাঁটু পানি। আর শুকনো মৌসুমে ধুলোর রাজ্যে পরিণত হয় সড়কটি। ফলে স্থানীয়দের এ সড়কে চলাচলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। সড়ক সংলগ্ন এলাবাসীদের বাড়িতে থাকাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও সমাধান পায়নি।
সড়কের বেহাল দশার কারণে শিশুরা স্কুলে যেতে চায়না। এলাকায় বিয়েসাদীসহ সামাজিক অনুষ্ঠান অনেকাংশে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত¡া মায়েদের এ সড়ক দিয়ে চিকিৎসালয়ে নিয়ে যেতে চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রেমবাগ ইউনিয়নের এ সড়ক দিয়ে চেঙ্গুটিয়া, চাপাতলা, মালোপাড়া, বাহিরঘাট, পালপাড়া-পাকেরগাতি, চেঙ্গুটিয়া পূর্ব, ঠাকুরতলা, সীবানন্দপুর, জগন্নাথপুর, শেখহাটি, নগরঘাট গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণে সবজি ও আখচাষ হয়ে থাকে। কিন্তু সড়কটি দিয়ে এসব ফসল বাজারে আনতে কৃষকদের গলদঘর্ম হতে হয়। প্রতিনিয়ত কৃষিপণ্য বহনকারী ভ্যান, গরুর গাড়ি, নসিমন ও মিনি পিকআপের চাকা ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সম্প্রতি ওই এলাকায় আগুন লেগে একটি পরিবারের সর্বস্ব শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে সড়কটি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বিড়ম্বনা হওয়ায় এবং গাড়ি আটকে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ফলে পরিবারটিকে পথে বসতে হয়েছে। সড়কটির এতটাই বেহালদশা যে সন্ধ্যার পর কেউ আর এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে পারেনা। ফলে এলাকায় চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির ৭ কিলোমিটার জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও যৎসামান্য ইট দেখে ধারনা করা যায় কোনো এক সময় সড়কটিতে ইটের সোলিং ছিল। চেঙ্গুটিয়া মহাজের পাড়ার ভ্যানচালক আনিচ মোড়ল বলেন, এই সড়কে ভ্যান চালিয়ে জীবন চালাতাম। একে একে তিন চারবার সড়কের খানা-খন্দে পড়ে ভ্যানের ফর ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন ভ্যান চালানো বাদ দিয়ে বাদাম বিক্রি করে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছি। ভ্যানচালক রহিম হোসেন বলেন, রাস্তায় গাড়ি বের করলেই কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। গাড়ি সারাই করতে আয়ের তিনগুণ খরচ হয়ে যায়।
কৃষক আজিজুর রহমান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সার-তেলের অতিরিক্ত দাম গুনে সবজি চাষ করে তা বাজারে নেয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। ফলে আমার মতো এলাকার শতশত কৃষককে মাঠেই পানির দামে উৎপাদিত সবজি ও আখ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বলেন, পর্যায়ক্রমে ইউনিয়নের সকল রাস্তা সংস্কার করা হবে। তার জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।
অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি বলেন, সড়কটির বেহাল দশার কথা জেনেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। আশাকরছি, দ্রæত রাস্তাটি সংস্কার করা সম্ভব হবে।