নওয়াপাড়া নৌবন্দরে জাহাজ থেকে লুট হওয়া ৮০ টন ভর্তুকির ডিএপি সার উদ্ধার
৫ জেলায় অভিযান চালিয়ে আটক ৯
প্রতিবেদক ও অভয়নগর প্রতিনিধি :
যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরে নোঙর করা দুটি লাইটার জাহাজ থেকে লুট করা ৮০ টন ডিএপি সার উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। একইসাথে এ ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার ৫ জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিবির ওসি রূপম কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারের ভর্তুকি দেওয়া ডিএপি সার আমদানির দরপত্র পায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়াস্থ মেসার্স আফিল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে ১৩শ’ মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করে। মংলা বন্দরে সার খালাসের পর তা দুটি লাইটার জাহাজের মাধ্যমে যশোর নওয়াপাড়া নৌবন্দরে আনা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর গভীররাতে বন্দরে নোঙর করা লাইটার জাহাজ থেকে কর্মীদের সহায়তায় অজ্ঞাত চোরেরা ১২০ টন সার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভয়নগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ডিবি ওসি রূপম কুমার সরকার জানান, মামলা পাওয়ার পর সার উদ্ধার ও জড়িতদের আটকে তদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশ। এরপর দুই দিনে যশোরের নওয়াপাড়া, বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ ও ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া ১২০ টন সারের মধ্যে ৮০ টন সার উদ্ধার করা হয়। এসময় জড়িত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতরা হলো, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাহিরঘাট এলাকার নবাব আলী গোলদারের ছেলে হুমায়ূন কবীর, তেঁতুলতলা মসজিদ এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সোহাগ হোসেন, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের অমল শিকদারের ছেলে অনিমেষ শিকদার, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কলমিগুনিয়া গ্রামের সুধান্ন সরকারের ছেলে ভুপাল সরকার, পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ সজীব, ঝাটকাটি গ্রামের বিমল সরকারের ছেলে লিখন সরকার, কুমিরমারা গ্রামের মোবারক আলী শিকদারের ছেলে আক্কাস আলী শিকদার, যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের আব্দুর রহিম মোড়লের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মেছেরশাহ সড়কের আবুল কালামের ছেলে পারভেজ আহমেদ রাজু।
ডিবি ওসি আরও জানান, আটককৃতদের মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নওয়াপাড়া সার, খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি সরদার ও সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, নওয়াপাড়া শিল্পবন্দরের কিছুসংখ্যক চোর ও ডাকাত দিনে ও রাতে অস্ত্র ঠেকিয়ে জাহাজের সার লুট করে নিচ্ছে। গত ৩০ বছর শত শত কোটি টাকার মাল চুরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহবুর আলম লাভলু বলেন, আমাদের দুইটা ছোট জাহাজ থেকে প্রায় ১৩০ টন সার দুবৃর্ত্তরা লুট করে। এককথায় তারা ডাকাতি করে। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৪০-৪৫ জন সন্ত্রাসী এই সার লুট করে তাদের ট্রলারে নিয়ে যায়।
এদিকে, পিরোজপুর থেকে সাংবাদিক নাসিম আলী জানিয়েছেন, পিরোজপুর থেকে আটক ফয়সাল মোরশেদ সজিব পিরোজপুর থানায় একটি মাদক মামলার আসামী। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পিরোজপুর, কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, মোড়েলগঞ্জ, মংলা, খুলনা, যশোরের নওয়াপাড়া ইত্যাদি এলাকাভিত্তিক দুই শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন পণ্য নদীপথে পাচারের অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এই সিন্ডিকেট কাউখালী, হুলারহাট, ইন্দুরকানীর কলারণ-সন্নাসী, মোড়েলগঞ্জ, মংলাসহ নদীপথে পণ্যবাহী নৌযান থেকে সিমেন্ট, গম, চাল, ভুট্টা ইত্যাদি দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে থাকে। মাঝে মাঝে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের হাতে দু-একটি চালান ধরা পড়লেও এই পাচার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।