যবিপ্রবি ছাত্রলীগে দু-পক্ষের সংঘর্ষ, অভিযুক্তদের ভাগ্য নির্ধারণ বুধবার
ফেসবুক স্ট্যাটাস
প্রতিবেদক :
ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় জড়িতদের ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে বুধবার (১৯ অক্টোবর)। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট পৃথক তদন্ত রির্পোট জমা দেবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন। এর আগে, গত রবিবার রাতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের অস্ত্রের মহড়া ও সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও ভুক্তভোগী আহত শিক্ষার্থীরা কোনো অভিযোগ দেয়নি।
ঘটনাটি শোনার পর আমি হল পরিদর্শন করেছি।
আহত সাংবাদিককেও দেখতে গিয়েছি।
হল প্রভোস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই ঘটনার সঙ্গে
যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্যাম্পাসে কোনো বিশৃংখলা হতে দেয়া হবে না।
– প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, উপাচার্য, যবিপ্রবি
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ডাকাতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী নুরুল আমিন। তিনি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ফেসবুক স্ট্যাটাসে নুরুল আমিন লেখেন : ‘আজ ৫ অক্টোবর যবিপ্রবির ইতিহাস রচনার দিন। আর এই ইতিহাস রচনার মূল নায়ক যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম শামীম হাসান। আমরা আশা করি উনি আবার আমাদের মাঝে আসবেন, ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া মোবাইল, ল্যাপটপ ফেরত দেওয়ার জন্য।’ এই স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম শামীম হাসানের ভাগনে ও বর্তমান যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনার জেরে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কদমতলায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের অনুসারী সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় ও ছাত্রলীগকর্মী জিসান আহমেদ অস্ত্র দিয়ে সভাপতি সোহেল রানার অনুসারীদের ধাওয়া করেন। এরপর কদমতলা থেকে তানভীর ফয়সালের অনুসারীরা শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে এসে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্ব তার অনুসারীরা হলে প্রবেশ করলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য শিহাব উদ্দিন সরকারকে মারধর করে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। শিহাবকে মারধর করে ছাত্রলীগকর্মী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান রহমান রাব্বি, রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জুবায়ের, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের বাহার, একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুর আলম, চতুর্থ বর্ষের সৌমিক, স্নাতকোত্তরের উত্তম, ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের বেলাল হোসেন, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকিব ইবনে সাইদসহ অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগকর্মী। তবে ক্যাম্পাসে কোনো অস্ত্রের মহড়া হয়নি বলে দাবি করেছেন যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমরা সভাপতি-সম্পাদক বসে বিষয়টি সমাধান করেছি। আর সাংবাদিকের মারপিটের ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।
যবিপ্রবির প্রক্টর ড. হাসান আল ইমরান বলেন, মারামারির ঘটনায় সোমবার উপাচার্য মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা মঙ্গলবারও দিতে পারিনি। অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি। বুধবার সকালে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। দোষীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমে কিছু বলা যাবে না বলে জানান তিনি।
যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি হল পরিদর্শন করেছি। আহত সাংবাদিককেও দেখতে গিয়েছি। হল প্রভোস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে কোনো বিশৃংখলা হতে দেয়া হবে না।