দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগির মৃত্যুতে স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হবার বদলে প্রতিদিনই কান্নার রোল পড়ে চুরির ঘটনায়। এমন দিন যেন নেই, যেদিন হাসপাতালে কারও না কারও মোবাইল, নগদ টাকা, থালাবাসন থেকে শুরু করে মূল্যবান সম্পদ চুরি হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ চুরি প্রতিরোধে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েও চোর শনাক্ত করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা। হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জামসহ চুরি হচ্ছে রোগীদের টাকা ও মোবাইল। হাসপাতালে বর্তমানে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। এ কারণে চুরি ঠেকাতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, হাসপাতালে চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরাও। চুরি হচ্ছে হাসপাতালের ল্যাটিনের ফিটিংস, লোহার পাইপ, গ্যাস সিলিন্ডার। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও চুরির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক সস্প্রতি তার ফেসবুক ওয়ালে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা চেয়ে ফরিয়াদ করেছেন।
মঙ্গলবার হাসপাতালের আউটডোরে টিকিট সংগ্রহের সময় সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জরিনা বেগমের সাড়ে ৫ হাজার টাকা বোরখার পকেট কেটে নিয়ে নিয়েছে পকেটমারেরা। একই সময়ে লিমা খাতুনের খোয়া যায় ৭ হাজার ৪শ’ টাকা। মুজিবনগর উপজেলার লিমা বলেন, মা হার্টের রোগি। সকালে মাকে হাসপাতালের মা ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্র্তি করি। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাউন্ডের চিকিৎসক মাকে দেখার পর জরুরি ওষুধ আনার জন্য ব্যবস্থপত্র দেন। ওষুধ কেনার জন্য শরীরে লুকিয়ে রাখা টাকা বের করে রাখার পর পলকেই দেখি টাকা নেই। একইদিন সোমাইয়া খাতুন নামের আরেক মহিলার দেড় হাজার টাকা, হাফিজুর রহমান ও মুনজুরা খাতুন নামের দুজনের দুটি মোবাইল হারিয়েছে পকেট থেকে।
হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে ৭ দিন ধরে চিকিৎসাধীন মফিজুর রহমান জানান, তার পাশের বেড থেকে সোমবার একটি ‘আইফোন’ চুরির ঘটনা ঘটে। রোগিরা ঘুমিয়ে গেলে প্রতিরাতেই কারও না কারও মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, এই চোরেরা বহিরাগত পকেটকাটা দল। অধিকাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে টিকিট কাউন্টার ও চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে রোগিদের জটলার মধ্যে। কেউ কেউ বলেছেন, নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিরা এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। এরা সুযোগসন্ধানী। সুযোগ বুঝে ভর্তি রোগিদের থালা-বাসনও নিয়ে যায়। গত দুই মাসে অন্তত দু’শতাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের টার্গেট করে হাসপাতালে চোরদের উপদ্রব বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সময়ে সেবা নিতে এসে শুধু এই হাসপাতাল থেকেই অর্ধশতাধিক নারীর স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল খোয়া গেছে। হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও তারা শুনেও না শুনার ভান করে প্রতিনিয়ত এড়িয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ দিলেই বলা হয় থানায় অভিযোগ করতে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার জানান, হাসপাতালে একটি পুলিশ ক্যাম্প ছিল। মাস কয়েক আগে ক্যাম্পটি তুলে নেয়ার পর চুরি বেড়ে গেছে। আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আমাদের পক্ষ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে মাইকিং করা হয়।