যশোরে রাস্তা দখল করে এমপির সমাবেশ
প্রতিবেদক :
যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চিত্রামোড় থেকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস (গাড়িখানা) সড়ক আটকে জনসমাবেশ করেছে জেলা শ্রমিকলীগ। ব্যস্ততম এ সড়কটি আটকে সমাবেশ করার কারণে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগের স্বীকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা শ্রমিকলীগের ব্যানারে এ জনসভার আয়োজন করলেও মূলত সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরাই এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। এর ফলে সড়ক বন্ধ করে এমপি নাবিল গ্রুপের শক্তির প্রদর্শনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করেছেন সমাবেশে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
জনসভাকে কেন্দ্র করে চিত্রামোড়ে সড়কের উপরে শনিবার রাত থেকে মঞ্চ নির্মাণ শুরু হয়। চিত্রামোড় থেকে শুরু করে গাড়িখানা সড়কের দড়াটানা অভিমুখে একপাশে নেতাকর্মীদের বসার জন্য চেয়ার বসানো হয়। ফলে আজ রবিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে এ সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে পুলিশ। দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয় এই জনসভা। শেষ হয় ৫টার দিকে। এর আগে দুপুর থেকেই সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিলসহকারে নেতাকর্মীরা জড়ো হয় জনসভাস্থলে। জনসভায় শ্রমিকলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিছিলসহকারে অংশ নেন। সমাবেশ করার কারণে দুপুর থেকে শহরের দড়াটানা-চিত্রামোড় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি নিয়ে প্রবেশ বাধা দেয়। সমাবেশের প্রথমদিকে দু’একটি বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দিলেও একপর্যায়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে এ সড়কে একেবারেই যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। যার প্রভাব পরে অন্য সড়কে। শহরবাসীকে অন্য সড়ক দিয়ে চৌরাস্তায় যেতে হয়েছে। এতে শহরের অত্যন্ত ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
জনসভায় ৫ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটেছিল দাবি করে জেলা শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী বলেন, চিত্রামোড়ে জনসভাবেশ করার অনুমতি নেওয়া ছিল। আধাঘন্টার মতো সময় জনসাধারণের যানজট ও ভোগান্তি হলেও আমাদের নেতাকর্মীরা সেটি দ্রæত জনসাধারণের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজকের সমাবেশটি আগামি সংসদ নির্বাচনে কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষে শ্রমিকলীগের মহড়ায় পরিণত হয়। এমনকি এমপি মহোদয় নির্বাচনী বার্তাও দিয়েছেন এই সমাবেশে।
যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, রাস্তা আটকে জনসভা করার অনুমতি দেয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। আমরা শুধু সমাবেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকি। রাস্তা দখল করে সমাবেশ শ্রমিকলীগ কেন করলো তিনি আয়োজকদের প্রশ্ন করতে বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ (সদর সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, শ্রমিকলীগের জনসমাবেশ শুধুমাত্র গাড়িখানার দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে করার অনুমতি দেওয়া ছিল। এর বাইরে কেন করলো জানা নেই। রাস্তা আটকে কেউ সমাবেশ করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ সমাবেশে নিরাপত্তার জন্য গাড়ি নিয়ে জনসাধারণের চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে। জনগণের সুবিধায় গাড়ির রুট ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জনসভায় ৪টার দিকে মঞ্চে উঠেন প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারের দায়িত্বে রেখে দেশের উন্নয়ন, প্রগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যেকালে তিনি বলেন, সারা বিশ্বের বহু রথী-মহারথীর ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের দারিদ্র্যসীমা ছিল ৪০ ভাগের বেশি, এখন তা ২০ ভাগে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ২২ শতাংশ, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।
জেলা শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, মেহেদী হাসান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেতারা খাতুন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি, অন্যটি সদরের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জেলা আওয়ামী লীগে এই গ্রুপিং রাজনীতিতে অন্যসহযোগী সংগঠনের মতো শ্রমিকলীগেও বিভক্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন মেয়াদউত্তীর্ণ এই সংগঠনটির সভাপতি পদ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।
জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর এ পদ নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। প্রথমে একপক্ষ সহসভাপতি জবেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিয়োগ করে। এর দুদিন পর অপরপক্ষ সহসভাপতি সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়। এতে জেলা শ্রমিকলীগের বর্তমানে দুজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রয়েছেন। জবেদ আলী যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী ও সাইফুর রহমান যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির অনুসারী। দুপক্ষই গঠনতন্ত্রের দুটি ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে নিজ নিজ পক্ষের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করছেন।