যশোরের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সুকুমার দাসের চিরবিদায়
প্রতিবেদক :
চিরবিদায় নিলেন যশোরের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি সুকুমার দাস (৬৬)। বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে (১২ এপ্রিল) যশোর নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
সপ্তাহ খানেক আগে সুকুমার দাসের হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় খুলনার একটি হাসপাতালে নিয়ে রিং স্থাপন করা হয়। এরপর তিনি বাসায় ছিলেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে বাড়িতে পড়ে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশীষ রায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু ও সহ-সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মৃত্যুকালে তিনি একমাত্র কন্যা সন্তান, স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুকুমার দাসের মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মরদেহ যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যশোরের সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
সুকুমার দাস ১৯৭৩ সালে যশোর উদীচীর সাথে যুক্ত হন এবং ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত একাধিকবার এ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের শেষদিকে তিনি গড়ে তোলেন আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। যশোরে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পদ্ধতিগত সঙ্গীত শিক্ষার বেসরকারি সঙ্গীত শিক্ষা বোর্ড ধ্রুব পরিষদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের দীর্ঘ ২৮ বছর তিনি মূল দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া টিআইবি যশোর সনাকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। যশোর শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
তার সুরকরা গান ‘আয় আয় দিন বদলের প্রত্যয়’ গানটি যশোর জেলা প্রশাসনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারই সুর করা আরেকটি গান ‘আরশীর সামনে একা একা দাঁড়িয়ে…’ আজ কেন্দ্রীয় উদীচীর সংগঠন সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার সুর করা মাইকেল মধূসূদন দত্তের রচিত ব্রজাঙ্গনা কাব্য সনেট ও নাটকের অসংখ্য গান বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার পরিবেশিত হয়েছে ও হচ্ছে। তিনি অসংখ্য দেশের গান, গণসঙ্গীত, ছড়া গান ও আধুনিক গানের সুর করেছেন।