জন্মদিনে স্মরণ : কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বাবলু ভট্টাচার্য
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভুত আধুনিক বাংলা কবিদের অন্যতম নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
‘ধমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’- এই লাইনটা অনেকেরই মুখে মুখে ফেরে। তাঁর ‘নীলনির্জন’, ‘নীরক্ত করবী’, ‘উলঙ্গ রাজা’ ও ‘কলকাতার যিশু’ তো এর মধ্যেই প্রবাদে পরিণত হয়েছে।
‘কবিতা কি ও কেন’ এবং ‘কবিতার ক্লাস’-এর মতো প্রাথমিক কবিতা শিক্ষার বই দিয়ে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন কাব্যপিপাসুদের কাছে। ‘পিতৃপুরুষ’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আত্মজীবনী।
আদ্যোপান্ত কবি-মানুষটিকে প্রথম চিনেছিলেন তাঁর বন্ধু, আরেক কবি অরুণকুমার সরকার, দিলীপ গুপ্তের সিগনেট থেকে নিজের নেপথ্য উদ্যোগে নীরেন্দ্রনাথের প্রথম কবিতার বই নীলনির্জন (১৯৫৪) বের করে তাঁকে বলেছিলেন ‘কবিতা না লিখলে তুই তো মারাই যাবি।’
তুঙ্গস্পর্শী কবিখ্যাতির পাশাপাশি ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, গদ্যকার, গোয়েন্দা-গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, ভ্রমণ-কাহিনীর লেখক, সম্পাদক, বানান-বিশেষজ্ঞ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
‘উলঙ্গ রাজা’ তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থ লেখার জন্য নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত।
তাঁর শৈশবের পুরোটাই কেটেছে বাংলাদেশে, ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কাছে। কবির ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবন শেষে ৫০ বছর বয়সে কলকাতার পাট চুকিয়ে বাংলাদেশের ফরিদপুর বাড়ি চান্দ্র গ্রামে চলে আসেন।
তার বাবা কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন। দুই বছর বয়সে কবির মা, বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান ঠাকুরদাদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে।
গ্রামে কাটিয়েছেন মহা স্বাধীনতা- ইচ্ছেমতো দৌড়ঝাঁপ করে। কখনো গাছে উঠছেন; কখনো আপন মনে ঘুরেছে গ্রামের এই প্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রাপ্তে। চার বছর বয়সে কবির কাকিমা বলছিলেন —
– ‘তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!’ সেই সময়েই মুখস্থ করেছিলেন কবিগান, রামায়ণ গান। ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে যান কবি।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯২৪ সালের আজকের দিনে (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব