বাবলু ভট্টাচার্য :
বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদ ও শহরের জীবনের লোক সাহিত্যকে তিনি প্রজন্মের জন্য গ্রন্থ আকারে রেখে গেছেন। তাঁর রচিত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।
তার বাবা আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকী ছিলেন একজন শৌখিন হোমিও চিকিৎসক এবং ইউনিয়ন পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। মা সমীরণ নেসা ছিলেন স্বভাব কবি।
আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন ড. সিদ্দিকী।
১৯৪৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাস্টার’ কবিতা রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণমানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ ছোটগল্প লেখক হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছোটগল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বাংলার মৌখিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তাঁর লেখা বইগুলো ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলি ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তির বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোকসাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৮৮ সালে সাহিত্যে একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, ইউনেসকো পুরস্কার, লোকসাহিত্য গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার অর্জন করেন আশরাফ সিদ্দিকী।
১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে আশরাফ সিদ্দিকী কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছয় বছর বাংলা একাডেমির দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন।
১৯ মার্চ ২০২০ সালে ৯৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ড. আশরাফ সিদ্দিকী ১৯২৭ সালের আজকের দিনে (১ মার্চ) টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব