সংবাদকক্ষ :
বিশ্বজুড়ে গত দু’বছরে এক কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনা আক্রান্ত হয়ে। এ সংখ্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিসংখ্যানের তথ্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি, বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা।
বিশ্বের ১৯১টি দেশ ও অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট, ওয়ার্ল্ড মর্টালিটি ডাটাবেস, হিউম্যান মর্টালিটি ডাটাবেস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে বৃহস্পতিবার ছাপাও হয়েছে সেই প্রতিবেদন।
দাপ্তরিক হিসেব অনুযায়ী, মহামারির গত দু’ বছরে বিশ্বজুড়ে করোনায় মারা গেছেন ৫৯ লাখের কিছু বেশি সংখ্যক মানুষ; কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি বা অবনতি হওয়া সত্ত্বেও গড় হিসেবে গত দু’বছরে বিশ্বে প্রতি একলাখ মানুষের মধ্যে কোভিডে মারা গেছেন ১২০ জন।
গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যু হার বেশি। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েকটি ধনী দেশেও ব্যাপক সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, এসওয়াতিনি, উত্তর মেডিডোনিয়া ও লেসোথো— এই ৫ দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানে মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে কম।
গবেষকরা জানান, মুষ্টিমেয় যে কয়েকটি দেশে করোনায় মৃত্যু সম্পর্কিত সরকারি তথ্য ও প্রকৃত সংখ্যার মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্য। গত দুই বছরে দেশটিতে প্রায় একলাখ ৭৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। অর্থাৎ গড় হিসেবে দেশটিতে প্রতি একলাখ মানুষের মধ্যে ১৩০ জন মারা গেছেন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষক দলের নেতা ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগের অধ্যাপক হাইডং ওয়াং বিবিসিকে জানান, জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিকল্পনা সাজাতে মহামারীতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানাটা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, সেসব দেশে ‘অতিরিক্ত মৃত্যুর’ প্রধান কারণ কোভিড। তবে বিশ্বের অনেক দেশের নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের হাতে নেই। আমরা মনে করি, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে কত সংখ্যক অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটেছে, সে বিষয়ক পরিপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে হলে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যোগ করেন তিনি।